• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

বিদেশে বেশি বেতনে চাকরির প্রলোভনে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ওরা

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৯ জুলাই ২০২০  

রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে ভিয়েতনামে মানব পাচারকারী চক্রের মূল হোতাসহ তিনজনকে আটক করেছে র‍্যাব। তারা হলো, চক্রের মূল হোতা মো. জামাল উদ্দিন ওরফে সোহাগ,  মো. কামাল হোসেন ও মো. জামাল হোসেন।  তারা বিদেশে বড় অঙ্কের বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে  কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর সিও লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল রাকিবুল হাসান এসব তথ্য জানান।

এসময় তিনি বলেন, গত ৩ জুলাই বিশেষ ফ্লাইটে ভিয়েতনাম থেকে ফেরত আসে ১১ বাংলাদেশি অভিবাসী। এছাড়া আরো ২৭ জন ভিয়েতনামে আটক অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফেরত আসা ১১ জনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে। 

র‍্যাব-৩ সিও বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার সাথে মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস, দি জেকে ওভারসিস লিমিটেড, অ্যাডভেন্ট ওভারসিস লিমিটেড, মেসার্স সন্ধানী ওভারসিস লিমিটেড এবং আল নোমান হিউম্যান রিসোর্স লিমিটেডসহ স্থানীয় দালাল এবং ভিয়েতনামে বাংলাদেশি দালালের সংশ্লিষ্টতার সত্যতা পাওয়া যায়। ভিয়েতনামে বাংলাদেশি দালালদের মধ্যে হয়েছে, আব্দুল জব্বার, মোস্তফা, গোলাম আজম সুমন, কল্পনা, আজমির, মিলন, শোভন ও আতিক। 

গ্রেফতারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা একাধিকবার ভিয়েতনামে গিয়ে দালালদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে ভিয়েতনামের দালালরা জানায়, বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের ভিয়েতনামে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই এ্যাজেন্সিগুলো বাংলাদেশের সাধারণ লোকজনকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতনে ভিয়েতনামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ হয়েছে বলে প্রলোভন দেখায়। 

দালালদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বেশি বেতনে প্রলুব্ধ হয়ে সাধারণ লোকজন ভিয়েতনাম যেতে আগ্রহ দেখায়। এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম যেতে ইচ্ছুক প্রতিজনের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা করে নেয়। টাকার বিনিময়ে ওই ব্যক্তিদের পাসপোর্ট বানানো হয় এবং পাসপোর্টের তথ্যসমূহ ভিয়েতনামের দালালদের কাছে পাঠানো হয়। ভিয়েতনামের দালালরা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী অফার লেটার (ভিয়েতনামের ভাষায়) বাংলাদেশের এ্যাজেন্সিগুলোতে পাঠিয়ে দেয়। অফার লেটারের মাধ্যমে ভিয়েতনাম অ্যাম্বাসী থেকে ভিসা সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ভিয়েতনাম সরকার স্বল্প মেয়াদে (সর্বোচ্চ ১ বছরের জন্য) বিনিয়োগকারীকে ডিএন ভিসা দিয়ে থাকে।

ডিএন ভিসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিএন ভিসায় ভিয়েতনামে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে নগদ অর্থ নিয়ে যেতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রত্যেক অভিবাসীকে ২ হাজার মার্কিন ডলার নিয়ে যেতে বাধ্য করে। এরপর বাংলাদেশি দালালদের মাধ্যমে তাদেরকে বিএমইটি কার্ড দেয়া হয়। 

ভিয়েতনামে যেভাবে আটক করে রাখা হয়- সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিয়েতনামে যাওয়ার পরে এই সাধারণ লোকজনকে ভিয়েতনামের দালালরা এয়ারপোর্টে রিসিভ করে। তাদের পাসপোর্ট কুক্ষিগত করে একটি ঘরে আটকে রাখে। পরবর্তীতে তাদেরকে জিম্মি করে পরিবারের কাছে টাকা-পয়সা দাবি করে।  তাদের কোনো স্থায়ী কর্মসংস্থান না করে বিভিন্ন সময়ে ছোট ছোট কাজ দেয়া হয়। এ পর্যায়ে ব্যক্তিদের পক্ষে বাংলাদেশে প্রতাবর্তন করা সম্ভব হয় না। ফলে তারা ভিয়েতনামে মানবেতর জীবন-যাপন করে। 

তিনি বলেন, তাদের একজন কুমিল্লার মো. নাজমুল হাসান। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় ৩ এপ্রিল মারা যান তিনি। নাজমুলের স্বজনরা স্থানীয় দালাল ও দি জেকে ওভারসিস লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোন ধরনের সহযোগিতা পায়নি। গত ২৭ জুন  ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির মুসলিম কলোনীতে নাজমুল হাসানের দাফন সম্পন্ন হয়।

দি জেকে ওভারসিস লিমিটেড সম্পর্কে  তিনি বলেন, দি জেকে ওভারসিস লিমিটেড ২০১৯ সালের নভেম্বরে ডিএন ভিসার মাধ্যমে ১৪ জন বাংলাদেশিকে ভিয়েতনামে পাঠায়, যাদের এখনো কোন কাজের সুযোগ মেলেনি। যার ফলে এসব শ্রমিক অর্ধাহার বা অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস, যাদের কোন নিজস্ব রিক্রুটিং লাইসেন্স নেই, দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য এজেন্সির লাইসেন্স ব্যবহার করে স্থানীয় পর্যায়ে দালাল নিয়োগের মাধ্যমে ভিয়েতনামে অভিবাসী পাঠিয়ে থাকে।

আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন হয়েছে বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।