• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

ভুঁড়িওয়ালা পুরুষের প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি: গবেষণা

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০২০  

ভুঁড়িওয়ালা পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমনই তথ্য জানিয়েছে নতুন এক গবেষণা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা স্বাস্থ্য বিভাগের নফিল্ড বিভাগের গবেষক দল এই তথ্য জানিয়েছে। তারাযুক্তরাজ্যের প্রায় দুই লাখ পুরুষকে নিয়ে করা একটি গবেষণায পরিচালনা করেছেন। এতে দেখা গেছে, যাদের বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) বেশি বা অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তাদেরই বেশি।

যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাংক পরিচালিত এই গবেষণায় অংশ নেয় ২ লাখ ১৮ হাজার ২২৫ জন পুরুষ। যাদের বয়সি ছিল ৪০ থেকে ৬৯ বছরের মধ্যে। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া এই গবেষণাটি চলে ২০১০ সাল পর্যন্ত। এই সময়কালের মধ্যেই গবেষণায় অংশ নেয়া ৫৭১ জন পুরুষ প্রস্টেট ক্যান্সারে মারা যায়।

গবেষকরা বিশ্লেষণ করে দেখেন, যেসব পুরুষের কোমরের মাপ ৪০ ইঞ্চি আবার নিতম্বের অনুপাতে পেট উঁচু হয় তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অপরদিকে যাদের কোমরের মাপ ৩৫ ইঞ্চি তাদের প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম ৪০ ইঞ্চির চেয়ে। 

প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এবং অ্যাডিপোসিটির ব্যবস্থা- শরীরের চর্বি পরিমাণের মধ্যে একটি সংযোগ অনুমান করার সময় চিকিত্সার ইতিহাস এবং আর্থ-সামাজিক এবং জীবনধারা বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়েছিল।

গবেষণার নেতৃত্বদানকারী ড. অরোরা পেরেজ-কর্নাগো বলেন, আমরা পেটের ও কোমরের চারপাশে শরীরের মেদ ঘনত্ব এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোগ খুঁজে পেয়েছি। তিনি আরো বলেছেন, অতিরিক্ত বিএমআই বিভিন্ন ক্যান্সারসহ দীর্ঘমেয়াাদি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডা. পেরেজ-কর্নাগো ব্যাখ্যা করেছেন, কোমর ও নিতম্বের অনুপাত ঠিক না থাকলে প্রস্টেট ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ে। শরীরের এই অংশের চর্বি সবচেয়ে বিপজ্জনক চর্বি। এই অতিরিক্ত চর্বি বিপাকক্রিয়া ও হরমোনজনিত সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি প্রোস্টেট ক্যান্সারের অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখে ভুঁড়ি। এই চিকিৎসক বলেন, পুরুষদের উচিত স্বাস্থ্যকর ওজন এবং কোমরের পরিমাপ ঠিক রাখা। এজন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও শরীরচর্চা।

এবার জেনে নিন প্রস্টেট ক্যান্সার হওয়ার লক্ষণসমূহ-

> রাতে একাধিক বার বাথরুমে যেতে হয়।

> বারবার বাথরুম যেতে হয়। প্রচণ্ড বেগ আসে তবে টয়লেটে গিয়ে প্রস্রাব শুরু হতে বেশ অসুবিধে হয়।

> দিনের বেলা তো বটেই রাতেও একাধিকবার বাথরুমে দৌড়তে হয়। রাতের অনেকটা সময় বাথরুমে কাটাতে হয় বলে ভালো করে ঘুম হয় না।

> বেগ থাকলেও ইউরিনের ফ্লো আগের থেকে অনেকটাই কমে যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে হেসিটেন্সি।

> প্রস্রাব পেলেও শেষ হতে অনেক সময় লাগে। আগে যেখানে এক থেকে দেড় মিনিট সময় লাগত, সেখানে দুই থেকে তিনগুণ সময় বেশি লাগে। কিছুতেই যেন প্রস্রাব শেষ হতে চায় না।

> প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরোনর সম্ভাবনা বাড়ে।

> কোমর ও উরুসহ লো ব্যাক পেন হতে পারে।

> ইরেকটাইল ডিসফাংশন হতে পারে,

> কোমর ও এর আশেপাশে অস্বস্তি ও ব্যথা হয়।

> প্রস্রাব ধরে রাখতে অসুবিধে হয়।

> প্রস্টেট গ্ল্যান্ড অতিরিক্ত বড় হয়ে গেলে অনেক সময় প্রস্রাব আটকে যেতে পারে। একে বলে রিটেনশন অব ইউরিন। এক্ষেত্রে অবিলম্বে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে ক্যাথিটারের সাহায্যে সাময়িক রিলিফ দেয়া হয়।

যেভাবে নির্ণয় করা যায় প্রস্টেট ক্যান্সার

পিএসএ টেস্ট করেই প্রস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা করা যায়। তবে কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা করিয়ে তবেই রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে তার আগে ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন করা দরকার। এই পরীক্ষায় যদি দেখা যায়,  প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটি শক্ত নডিউলের মতো হয়েছে, তখন প্রস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনার কথা ভাবতে হয়। পিএসএ-র পরিমাণ চার এর থেকে অনেক বেশি হলে ক্যান্সারের আশঙ্কা করা হয়। প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান, এমআরআই ও বায়োপ্সি করে ক্যান্সারের স্টেজ নির্ণয় করা হয়। ক্যান্সার কতটা ছড়িয়ে পড়েছে জানতে আইসোটোপ বোন স্ক্যান করার প্রয়োজন হতে পারে।