• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

‘মজা’ করতে গিয়ে কারাগারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২০  

কুষ্টিয়ায় করোনা নিয়ে জেলা প্রশাসকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি কপি করে নিজের নাম ব্যবহার করে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে প্রচার করছিলেন এক তরুণী। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে এলে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলায় তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

শনিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। মামলায় মীর মনিরা (২২) নামে ওই তরুণীকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। মনিরা কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়া এলাকার মীর মিজানুর ইসলামের মেয়ে।

মামলার এজাহার ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার এক চিকিৎসকের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, মীর মনিরা নামের একজন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রচার করছেন এবং নিজেকে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনার বিএমডিসির (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) সভাপতি প্রফেসর মো. শহিদুল্লাহর কাছ থেকে জানতে পেরেছেন বলে জানান। তাৎক্ষণিক কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বিএমডিসির সভাপতির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। এসময় প্রফেসর শহিদুল্লাহ জানান, মেসেজগুলো তার ভাগ্নে ইকবাল হোসেন শামীমের কাছ থেকে পেয়েছেন। মীর মনিরা তার কাছে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক হিসেবে একটি প্রেস রিলিস পাঠান। ডিসি পরিচয় দিয়ে মীর মনিরা বিভিন্ন সময়ে মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এমনকি মনিরা প্রধানমন্ত্রীর সাথেও কথাবার্তা বলেন দাবি করেন। এসব বিষয় বিএমডিসির সভাপতি প্রফেসর শহিদুল্লাহ জানার সাথে সাথে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে অবগত করে তার ভাগ্নে ও মীর মনিরার আপন খালু ইকবাল হোসেন শামীমের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোবাইলে ইকবাল হোসেন শামীমের কাছে মীর মনিরা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মীর মনিরা তো কুষ্টিয়ার ডিসি। বিস্তারিত জানতে তাকে বাসভবনে আসতে অনুরোধ করলে তিনি বলেন আমি জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও কার্যালয় কোনটিই চিনি না। পরে তাকে আনতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি গাড়ি পাঠানো হয়। শুক্রবার রাতে সেই গাড়িতে মীর মনিরাকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে আসেন ইকবাল হোসেন। এসময় জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মীর মনিরার কাছ থেকে সবকিছু জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি সবকিছুই অস্বীকার করতে থাকেন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট লুৎফুন্নাহার আলাদাভাবে মীর মনিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। রাতেই মীর মনিরাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট লুৎফুন্নাহার জানান, মীর মনিরা জানিয়েছে তারা ৭ বন্ধু মিলে এই পরিকল্পনা করেন। কুষ্টিয়ার ডিসি পরিচয়ে মনিরা নিজের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করতে থাকেন।

মামলার বাদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেষ্ঠ্য সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি করোনা বিষয়ে জেলা প্রশাসক প্রতিদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জেলা প্রশাসনের ফেসবুকে পোস্ট দিতেন। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির কপিতে জেলা প্রশাসকের নাম ও স্বাক্ষর এডিট করে সেখানে মীর মনিরা নাম ও স্বাক্ষর দিয়ে সেটা তার পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে পাঠাতেন। এটা তিনি মজা করে করতেন বলে জানিয়েছেন।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, আইসিটি আইনে মামলায় ওই তরুণীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।