• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

মা জানতেন ওরা বাবাকে হত্যা করেছে,তবুও জীবন ভিক্ষা চাননি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০১৯  

১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের এই দিন আমাদের মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমি ১৫ আগস্ট যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাদের স্মরণ করছি। আমি স্মরণ করি জাতীয় চার নেতাকে, ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা বোনকে যাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো। লাখো শহীদ দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে স্বাধীনতার  সংগ্রাম শুরু হয়েছিলো ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন থেকে সেখান থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে এ আন্দোলন শুরু করেন। ধাপে ধাপে বাঙালি জাতিকে নিয়ে যায় স্বাধীনতার যে অর্জন সেই অর্জনের দিকে। একটি জাতিকে প্রস্তুত করা, একটি জাতিকে মানসিকভাবে তৈরি করা এবং একটি জাতিকে বাঙালি জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এটাই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একমাত্র লক্ষ।

এতো ত্যাগের খেসারত দিতে হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই কালো রাতে। শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি হত্যাকারীরা সেদিন হত্যা করা হয়েছিল গোটা একটা পরিবার। আমার মেঝো ফুফু, সেঝো ফুফু এমনকি আমার ছোট ফুফুর বাসায়ও এ হত্যাকান্ড চালানো হয়েছিল। এমনকি আমি যে ৩২ নম্বর বাসায় থাকতাম সেখানেও হত্যাকা- চালিয়েছে ঘাতকরা। আমাদের বাড়িতে যারাই ছিল সবাইকে ঘাতকরা হত্যা করেছিল। আমার ভাই কামাল, জামাল, রাসেলকে ঘাতকরা হত্যা করেছে। আমার মা যখন জেনেছে যে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন তিনি  নিজের দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেও, কামাল, জামাল, রাসেলকে একত্রে গুলি করে, তখন আমার মা বলেছিল আমাকেও হত্যা করে ফেল তারপর ঘাতকরা তাকেও হত্যা করে। সবশেষে আমার ছোট ভাই রাসেলকে হত্যা করে। আমার একমাত্র চাচা শেখ আবু নাসেরকেও হত্যা করা হয় সেই রাতে।

আমার মেঝো ফুফুর বাড়িতে যায়, ঘাতকরা শেখ মনিকে হত্যা করে, তার অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী আরজুকে হত্যা করা হয়। আমার সেজো ফুফুর বাসায় গিয়ে আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ, তৎকালীন কৃষি মন্ত্রী, তাকে হত্যা করে, তার মেয়ে বেবি, ১৩ বছরের তাকে হত্যা করে, তার ছেলে আরিফ সে রাসেলের খেলার সাথী তাকে হত্যা করে, তার নাতি সুকান্ত তার বয়স মাত্র ৪ বছর তাকেও হত্যা করে, শহীদ সেরনিয়াবাদ সাংবাদিক ছিল তাকে হত্যা করে, রিন্টু তার আরো একজন আত্নীয় তাকে হত্যা করে, আমার ফুফু গুলি খেয়ে পঙ্গু অবস্থায় ছিল। আমার আরো এক ফুফু গুলি খেয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর স্ত্রী গুলি খেয়েছিল। শুধু হাসনাত ভাইর মেয়েটা বেঁচে গিয়েছিল। কারণ দাদির গায়ে গুলি লেগেছিল ও ফুফুর গায়ে গুলি লেগে হাসনাত ভাইর মেয়েটা নিচে তাদের দুজনের নিচে পড়ে ও বেঁচে গিয়েছিল। ঘাতকরা একবার নয় দুবার ঘরে ঢুকে গুলি চালায়।

আমার আরো একজন ফুফাতো ভাই তার পায়ে গুলি লেগেছিল। কাজের বুয়া থেকে শুরু করে তার ছেলে সহ সবাইকে হত্যা করেছিল ঘাতকরা।

ছোট ফুফুর বাসায় গিয়ে তাকে পায়নি তখন সে হাঁটতে বেড়িয়েছিল, তাকে পরবর্তিতে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। তাকে চার মাস পর্যন্ত হাউস এ্যারেস্ট করে রাখে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল এটা একটা পরিবারের উপর আঘাত এটা বোঝার ভুলছিল যে,এটা একটা পরিবারের উপর নয় কারণ যাদের হত্যা করা হয়েছিল সবাই মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তারা সরাসরি হাতে বন্ধুক নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত সহ মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এ হত্যাকান্ড ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছিলাম সেই বিজয়ের প্রতিশোধ নেয়া এবং সেই বিজয়কে ধুলিসাৎ করে দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের আবার ক্ষমতায় পূর্ণবাসিত করা। আবার ওই পাকিস্তানিদের ভাবধারা নিয়ে আসা।

আমরা দুই বোন রেহানা আর আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা আমাদের দুর্ভাগ্য ছিল মাত্র ১৫ দিন আগে আমরা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম দুটি বাচ্চাকে নিয়ে স্বামীর কর্মস্থলে। আমার সাথে রেহানাকেও নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা দুবোন বেঁচে গিয়েছিলাম আসলে সে বাঁচাটা বাঁচা নয়। আর সেই বাঁচাটা যন্ত্রণার মৃত্যুর চেয়েও যন্ত্রণাদায়ক। ৬ বছর দেশে আসতে পারিনি অন্যদেশে রিফিউজি হয়ে আশ্রয় নিয়ে থাকতে হয়েছে। বিদেশে বসেও দলের জন্য কাজ করেছি।