• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে নতুন ভাবনায় সরকার

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০১৯  

মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। ইসলামী শিক্ষার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় করে যুগোপযোগী পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ অবকাঠামো উন্নয়নেও পদক্ষেপ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। এ শিক্ষার উন্নয়নে সরকার একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। ২০২০ সালের মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার মাদ্রাসায় ভোকেশনাল শিক্ষা চালু করবে সরকার। ২০৩০ সালের মধ্যে সব মাদ্রাসায় ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া সময়ের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী হচ্ছে পাঠক্রম। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা সচিব মো. আলমগীর বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একজন শিক্ষার্থী যেন নৈতিক, সৎ মানুষ হওয়ার পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানেও সমানভাবে দক্ষ হয়ে দেশের সেবায় ভূমিকা রাখতে পারে সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসার শিক্ষা। মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের আর হেয় করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তারা প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন পরীক্ষায় নিজেদের অবস্থান করে নিয়েছেন। এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে চেহারাই পাল্টে যাবে মাদ্রাসা শিক্ষার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানান, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা যেন গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে চাকরির বাজারে নিজেদের অবস্থান করে নিতে পারে সেজন্য মাদ্রাসাগুলোয় কারিগরি প্রোগ্রাম ব্যাপকভাবে চালু করতে যাচ্ছে সরকার। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) বাস্তবায়নের জন্য ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান অব  মিনিস্ট্রির তথ্যমতে, ৫০০ মাদ্রাসায় অন্তত একটি টেকনিক্যাল বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার মাদ্রাসায় ভোকেশনাল চালু এবং সব মাদ্রাসাকে ডিজিটাল ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের আওতায় আনা হবে। ২০২০ সালের মধ্যে পুরো মাদ্রাসা কারিকুলাম টেক্সটকে ডিজিটাল কনটেন্টের (আইডিএমটি) আওতায় আনা হবে। এবতেদায়িসহ সকল পর্যায়ের মাদ্রাসা শিক্ষকের প্রশিক্ষণেও জোর দিচ্ছে সরকার। এ ছাড়া কারিকুলাম পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করা হবে। যেসব বিষয়বস্তু/অধ্যায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছে সেগুলো পরিবর্তন করে নতুন অধ্যায় সংযোজন করা হবে।
মাদ্রাসা পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের ইংরেজি ও আরবিতে দক্ষ করতে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আরবি ভাষায় ও ৫ হাজার ছাত্রছাত্রীকে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করতে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। মাদ্রাসা শিক্ষায় এনরোলমেন্ট বাড়াতে, ঝরে পড়া কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এবতেদায়িসহ দাখিল থেকে কামিল পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষার বিভিন্ন উন্নয়নে ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, শিগগিরই একটি প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৮০০ মাদ্রাসায় অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চার থেকে ছয় তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। অঞ্চলভেদে বন্যাপ্রবণ ও হাওর এলাকা এবং জেলাভিত্তিক আলাদা ডিজাইনের ভবন নির্মাণ করা হবে। সুপেয় পানির পাশাপাশি ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচাগারের ব্যবস্থাও থাকবে মাদ্রাসায়। শিগগিরই এসব কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা।

দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কওমি মাদ্রাসার ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। এসব মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এর আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ছায়েফ উল্যা বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে গত ১০ বছর ছিল মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের স্বর্ণযুগ। এ শিক্ষার উন্নয়নে সরকার আরও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে কারিকুলাম আপগ্রেডেশন কাজ চলছে। ছাত্রছাত্রীরা যেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে সে ব্যাপারে কাজ চলছে। তিনি বলেন, ক্রমান্বয়ে দেশের সব মাদ্রাসায় কারিগরি শিক্ষা খোলা হবে। এতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারে চাহিদা বাড়বে।