• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

যে সব উদ্ভাবনের কারণে পৃথিবীতে শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০১৯  

১৭ শতকের পূর্বে মানুষের জীবিকা ছিল কৃষি নির্ভর। তখন মানুষের সাথে যন্ত্রের পরিচয় ছিল না বললেই চলে। তারা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজ বাড়িতেই তৈরি করতো। ব্যবসায়ীরা কারিগরের বাড়িতে কাঁচামাল পৌঁছে দিয়ে পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখত। তাই পণ্যের উৎপাদন খরচ ছিল ব্যাপক যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ঊর্ধ্বে। এটা ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা। পৃথিবীতে মানব জাতীর জন্ম থেকেই তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে আর সমস্যাগুলো মোকাবেলা করে বার বার ছিনিয়ে এনেছে মানব জাতীর বিজয়। আজ পর্যন্তও ধরে রেখেছে অপরাজেয় বিশেষণ।

তাই এবারও মানুষ আবিষ্কার করলো সমস্যার নতুন সমাধান। পণ্যের উৎপাদন খরচ তথা পরিবহন খরচ কমানোর জন্য মানুষ বিভিন্ন চিন্তা করতে থাকল। এসব চিন্তা থেকে বেশ কিছু উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্পের অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছিল যা পৃথিবীতে শিল্পের এক বিপ্লব সাধিত হয়।

শিল্পের জন্মস্থানব্রিটেন

১৫ শতকের শেষের দিক থেকেই ব্রিটিশরা সারা বিশ্বে কলোনি গরতে থাকে। পৃথিবীতে সমানুপাতিক হাড়ে ছড়াতে থাকে তাদের আধিপত্য এবং বাণিজ্য। তাই তাদের পণ্য উৎপাদনের কাচামাল ছিল সহজলভ্য এবং পণ্য বাজারজাত করার জন্য ছিল এক বিশাল পৃথিবী। কিন্তু পণ্য উৎপাদন খচর ছিল অত্যধিক যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ঊর্ধ্বে।

                                                    ব্রিটেনের শিল্প বিপ্লব

ব্রিটিশরা শুধু অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ছিল তাই নয় তারা চিন্তা চেতনায়ও ছিল সম্মৃদ্ধ। তারা বেশ কিছু নতুন জিনিস উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছিল যা পণ্যকে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এনেছিল। এর ফলে বাড়তে থাকে পণ্যের চাহিদা। মানুষের চাহিদার যোগান দিতেই সমগ্র ব্রিটেন জুরে গড়ে উঠতে থাকে শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠান। যা পৃথিবীকে শিল্পায়িত করতে প্রধান ভূমিকা রেখেছিল। তাই ব্রিটেনকে শিল্প বিপ্লবের জন্মস্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর এটা ছিল ১৭ থেকে ১৮ শতকের মাঝে।

উদ্ভাবন এবং শিল্পায়ন

১৭ শতক থেকে ১৮ শতক পর্যন্ত বেশ কিছু যন্ত্র উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছিল। এসব যন্ত্র শিল্প উৎপাদন, যোগাযোগ, ব্যাংকিং ও পরিবহন খাতে অকল্পনীয় পরিবর্তন করেছিল। এর মাধ্যমেই শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল।

সুতা বুনন যন্ত্র

বিশেষভাবে বলতে গেলে শিল্প বিপ্লবের প্রধান নায়ক হল বস্র শিল্প। যখন বস্র শিল্পে যন্ত্রের সমন্বয় হল তখন এর উৎপাদন হার রাতারাতি বৃদ্ধি পেল যার ফলে উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমে গেল। এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে ইংরেজ উদ্ভাবক জেমস হারগ্রেবস-এর ১৭৬৪ সালে তৈরি করা স্পিনিং জেনি (জেনি শব্দটির অভিধানিক অর্থ ইঞ্জিন)।

                                                            স্পিনিং জেনি

এই যন্ত্র সুতা উৎপাদনের হার বৃদ্ধি সহ মানুষের পরিশ্রমকে কমিয়ে এনেছিল। ব্যবসায়ীরা এই যন্ত্র একটি ঘরে স্থাপন করত এবং কর্মীরা সেখানে এসে কাজ করত। তখন তারা ভাবতে শুরু করল কাজ মানুষের বাড়িতে নয় মানুষ যাবে কাজের কাছে। এভাবেই শিল্প প্রতিষ্ঠান বা ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা শুরু হল। স্পিনিং জেনির উদ্ভাবক জেমস হারগ্রেবস মাড়া যাবার সময় পুরো ব্রিটেনে প্রায় ২০,০০০ স্পিনিং জেনির ব্যবহার হচ্ছিল।

এরপর আরেক ইংরেজ উদ্ভাবক এডমুন্ড কাটওয়েট ১৭৮০ সালে উদ্ভাবন করেন ‘পাওয়ার লুম’ বা কাপড় বুনন যন্ত্র। এই পাওয়ার লুম বস্ত্র শিল্পকে আধুনিক বস্ত্র শিল্পে রূপান্তর করেছিল।

                                                            পাওয়ার লুম 

লৌহ শিল্প

শিল্প বিপ্লবের দ্বিতীয় নায়কের ভূমিকা পালন করে লৌহ শিল্প। লোহা উৎপাদনের সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবনের ফলে বাড়তে থাকে লোহা উৎপাদন এবং বড় বড় যন্ত্র যা বিভিন্ন শিল্পের উৎপাদন কাজ থেকে শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করেছিল। ১৮ শতকের শুরুতে এই লৌহ শিল্পে আসে এক বিশাল পরিবর্তন।

                                                                        লৌহ শিল্প 

আকরিক থেকে লোহা উৎপাদনের পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ আবিষ্কারক আব্রাহাম ডার্বি। এর পর আরেক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হেনরি বেসিমার ১৮৫০ সালে আবিষ্কার করেন বেসিমার পদ্ধতি। ফলে লোহা উৎপাদন সহজ হয় এবং এসব লোহা ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন উৎপাদন মুখী শিল্পের যন্ত্র তৈরিতে যেমন, জাহাজ শিল্পে, গাড়ি তৈরিতে, বিল্ডিং তৈরিতে, মেশিন টুলস উৎপাদন সহ হাজারো শিল্পে।

বাষ্প ইঞ্জিন

মানুষ পণ্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কার করার ফলে পণ্য উৎপাদন হার বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব হয় কিন্তু উৎপাদন করা এসব পণ্য মানুষের কাছে পৌছতে অনেক সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ব্যাপার ছিল। তখন পণ্য পরিবহনের একমাত্র বাহন ছিল জলতরী অথবা ঘোড়া বা অন্যান্য পশু দ্বারা চালিত গাড়ী।

                                                     বাষ্পচালিত রেলগাড়ি 

১৭১২ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী থমাস নিউকমেন আবিষ্কার করেন করেন বাষ্প ইঞ্জিন যা পরবর্তীতে স্কটিশ বিজ্ঞানী জেমস ওয়াট ১৭৭০ এর দিকে এই যন্ত্রকে উন্নয়ন করে তৈরি করেন আধুনিক বাষ্প ইঞ্জিন। যা ব্যবহৃত হয় পাওয়ার উৎপাদনে, পাওয়ার লুম, রেলগাড়ি, জল জাহাজ ইত্যাদিতে। ফলে মানুষের যাতায়াত হয়ে সহজ এবং পণ্য আনা নেওয়া কাজ সহ কাঁচামাল স্থানান্তর কাজ সহজ হয়।

যোগাযোগ এবং শিল্প বিপ্লব

বাষ্প ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে এই ইঞ্জিনগুলো ব্যবহৃত হতে থাকে বিশাল বিশাল জল-জাহাজ গুলোতে। এই বিশাল বিশাল জাহাজ গুলো পুরো আটলান্টিক মহাসাগরের বুক চিরে এফোঁড় ওফোঁড় করে ঘুরে বেড়াতে থাকে সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে। ১৮০০ সালে রিচার্ড ট্রিভিথিক প্রথম বাষ্প ইঞ্জিন চালিত রেলগাড়ি ডিজাইন করেন। এর ফলে স্থল পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হয়।

                                                              টেলিগ্রাফ 

১৮৩৭ সালে উইলিয়াম কুক এবং চার্লস হোয়েটসন আবিষ্কার করেন টেলিগ্রাফ। এর মাধ্যমে যোগাযোগের অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয় । এতে করে সারা বিশ্ব পায় আধুনিকতার ছোঁয়া। মানুষ আগ্রহী হয়ে ওঠে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে।

শিল্প বিপ্লবে ব্যাংকিং এর অবদান

সারা বিশ্বে শিল্পের প্রসার হওয়ায় অর্থের লেনদেন বাড়তে থাকে । তাই তৈরি হয় ব্যাংকিং সহ অর্থ নিয়ে কারবার কারি প্রতিষ্ঠান গুলো। ১৭৭০ সালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত হয় স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। ১৭৭৬ সালে স্কটিশ দার্শনিক অ্যাডাম স্মিথ প্রকাশ করেন ‘দি ওয়েলথ অব নেশন’ বইটি যায় ফলে মানুষ পায় আধুনিক ব্যবসা ও অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা।

এভাবে ব্রিটেনের একঝাঁক মেধাবী মানুষের দ্বারা উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয় বিশেষ কিছু যন্ত্র যা মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয় শিল্পকে। যার ফলে শিল্প ক্ষেত্রে সাধিত হয় বিপ্লব তথা রূপান্তরিত হয় আজকের শিল্প ভিত্তিক বিশ্ব।