• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

যেমন ছিল নবিজির জীবনের শেষ মুহূর্তটি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০১৯  


ইশার সময় তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়লেন। নড়াচড়া করার শক্তি পর্যন্ত ছিল না। তিনি অসুস্থ হলে অনেক ভারী হয়ে উঠতেন, যেন দশজনের মতো ভারী হতেন। আমরা অসুখে নড়াচড়া করতে না পারলেও কিছুটা চলতে পারি। কিন্তু তিনি একদমই পারলেন না। একটা সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। অনেক সময় পর তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন। জ্ঞান ফিরেই তাৎক্ষণিক যেই প্রশ্নটি প্রথম করলেন সেটি হলো, ‘লোকেরা কি নামাজ পড়ে ফেলেছে?’ 

উম্মুল মুমিনিন আয়িশা (রা.) বললেন, ‘না, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তারা এখনও আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা এখনও আপনার ইমামতির আশা করছে।’ 

তিনি কুয়া থেকে পানি আনতে বললেন। শীতল স্বচ্ছ পানি। পানি আনা হলো। তিনি পানির কাছে গেলেন, ফ্রেশ হলেন, গোসল করলেন। এভাবে যখন গোসলের পর একটু শক্তি পেলেন তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং মসজিদে প্রবেশ করলেন। তিনি আবারো জ্ঞান হারালেন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি আবার জ্ঞান ফিরে পেলেন। জ্ঞান ফিরে পেয়েই প্রথম যে কথাটি মুখ দিয়ে বললেন সেটি হলো, ‘মানুষজন কি নামাজ পড়ে ফেলেছে? মানুষজন কি নামাজ পড়ে ফেলেছে? মানুষজন কি নামাজ পড়ে ফেলেছে?’

‘না, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তারা এখনও আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে।’ আয়িশা (রা.) বললেন। 

রাসুল (সা.) আবারও উঠে দাঁড়ালেন। ওযু করে আবারও উঠতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না, তিনি পড়ে গেলেন–তৃতীয়বারের মতো। 

জ্ঞান ফিরে পেতেই আবার বললেন, ‘মানুষজন কি নামাজ পড়ে ফেলেছে?’ 

বলা হলো, ‘না, এখনও সবাই আপনার অপেক্ষা করছে।’ 

এবার নবিজি (সা.) আবু বকর (রা.)-কে নামাজের ইমামতির অনুমতি দিলেন। তিনি ইশার নামাজ পড়ালেন। এরপর মাঝে তিনদিন তিনি নামাজের ইমামতি করলেন, আল্লাহর রাসুলের উপস্থিতিতে। মোট ১৭ ওয়াক্ত নামাজ তিনি পড়িয়েছিলেন নবিজির জীবদ্দশায়।

সোমবার। ফজরের সময়। আবু বকর (রা.) ফজরের নামাজের ইমামতি করছিলেন। হঠাৎ করে সামনে থেকে আয়িশা (রা.) এর ঘরের পর্দা খুলে গেলো। মসজিদের সাথে লাগোয়া ঘর থাকায় প্রথম কাতার থেকে আবু বকর (রা.) আল্লাহর রাসুলকে দেখতে পেলেন। আবু বকর (রা.) সরে আসতে চাইলেন, যেন রাসুল (সা.) ইমামতি করতে পারেন। আনাস (রা.) বলেন, আমরা আনন্দে তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি মুচকি হাসলেন। ইশারায় আবু বকর (রা.)-কে না করলেন, নামাজ চালিয়ে যেতে বললেন। রাসুল (সা.) দেখলেন, আবু বকর (রা.) তাঁর উম্মাহকে নামাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেখলেন, তাঁর উম্মত মসজিদে নামাজরত অবস্থায় রয়েছে, ঐক্যবদ্ধভাবে।

শেষ সময় ঘনিয়ে এলো। রাসুল (সা.) আয়িশা (রা.) এর কোলে শুয়ে আছেন। ঘরে প্রবেশ করলেন আব্দুর রহমান (রা.)। তিনি একটা মিসওয়াক নিয়ে ঢুকেছিলেন ঘরে। রাসুল (সা.) আব্দুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আয়িশা!’

তিনি বুঝতে পারলেন। বললেন, ‘মিসওয়াক দিবো, প্রিয়?’

নবিজি ইশারায় ‘হ্যাঁ’ বললেন। 

আয়িশা (রা.) আব্দুর রহমান থেকে মিসওয়াক নিলেন, সেটাকে চিবিয়ে নরম করে দিলেন নবিজিকে। তিনি মিসওয়াক করলেন। একটু পর মাথা তুললেন। চোখ মেলে তাকালেন। তার পবিত্র জবানে কিছু বললেন। আয়িশা (রা.) বলেন, তিনি বলেছিলেন- ‘হে আল্লাহ, আপনি নবি, সিদ্দিক, শুহাদা এবং সালিহিনের উপর দয়া করেছেন।’ তিনি আরও বললেন, 

 اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِىْ وَارْحَمْنِىْ وَأَلْحِقْنِىْ بِالرَّفِيْقِ الأَعْلَى

‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন এবং আমাকে সর্বোচ্চ বন্ধুর সাথে মিলিত করুন।’

তিনি আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার আশা করলেন। দুনিয়াতেও তিনি নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে মিলিত হতেন। শেষ মুহূর্তে প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশার বুকে শায়িত অবস্থায়ও আল্লাহর সাক্ষাত আশা করলেন। আয়িশার কোলে আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্যে চলে যাওয়ার পূর্বে তাঁর জীবনের সর্বশেষ শব্দগুলি ছিল-

‘আস-সালাত! আস-সালাত! আস-সালাত!’

‘তোমরা নামাজের ব্যাপারে সতর্ক থেকো, নামাজের ব্যাপারে যত্ন নিও, নামাজের ব্যাপারে খেয়াল রেখো।’