• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

শরীয়তপুর বাসীর উকিল মাতা রাহিলা

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৮  

শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ

শরীয়তপুরবাসীর উকিল মাতা হিসেবে পরিচিত মোসা. রাহিলা খাতুন (৬৬)। শুধু শাসন করে সন্তানদের মানুষ (সু-শিক্ষিত) করা যায় না। পাশাপাশি ভালোবাসাও দিতে হয়- এমনিভাবে কথাগুলো বললেন উকিল মাতা রাহিলা খাতুন। শরীয়তপুর সদর উপজেলার টাউন চিকন্দী গ্রামে বাস করেও স্বামীর অবর্তমানে নানা প্রতিকূলতার মাঝে ছয় সন্তানকে উচ্চশিক্ষত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই মহিয়সী নারী। রাহিলা খাতুনের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে বর্তমানে সকলে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার টাউন চিকন্দী গ্রামে বসে কথা হয় এই মহিয়সী নারীর সঙ্গে। রাহিলা জানান, তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী মৃত আবুল হোসেন মুন্সী পেশায় একজন আইনজীবী সহকারী ছিলেন। পরবর্তীতে মাত্র ২৮ বছর বয়সে পাঁচ ছেলে ও এক সন্তান নিয়ে বিধবা হন রাহেলা। অক্ষর জ্ঞানহীন মোসা. রাহিলা খাতুন কঠোর সংগ্রামের মধ্যদিয়ে সততা এবং আদর্শকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেক সন্তানকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন।

পরিবারের খরচ যোগাতে বড় ছেলে মো. আলমগীর মুন্সী চিকন্দী সড়ব আলী উচ্চ বিদ্যালয় সপ্তম শ্রেণি পড়া অবস্থায় (বাবার ডাইরি নিয়ে) আইনজীবীর সহযোগিতা করেন। বড় ছেলের বয়স যখন ১৪ বছর তখন তার স্বামী মারা যান। এরপর শক্ত হাতে হাল ধরেন মোসা. রাহিলা খাতুন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে কোনো মূল্যে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। স্বামীর বাড়িতে জমি ছাড়া কিছুই ছিল না। এরপর স্বামীর রেখে যাওয়া নিজের বাড়ির একটা ঘর (ডাকঘর) সরকারের কাছে ভাড়া দেন এবং বাড়ির সুপারি ও নারকেল বিক্রি করে সহযোগিতাসহ অন্যান্য সন্তানদের লেখাপড়ার প্রতি নজর দেন।

চিকন্দী মুন্সী পরিবার সূত্রে জানা যায়, মোসা. রাহিলা খাতুনের প্রথম ছেলে অ্যাড. মো. আলমগীর মুন্সী বাংলাদেশ ল কলেজ থেকে এলএলবি পাস করে। এরপর ২০০৬ সালে থেকে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নিয়মিত সদস্য হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত এবং জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) হিসেবে কর্মরত আছেন।

দ্বিতীয় ছেলে অ্যাড. মো. হুমায়ুন কবীর মুন্সী রাজধানীর ইউআইটিএস নামে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে এলএলবি এবং কুমিল্লার ময়নামতি সার্ভে ইন্সস্টিটিউট থেকে সার্ভে ট্রেনিং পাস করেন। ২০১১ সাল থেকে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নিয়মিত সদস্য হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন তিনি। বর্তমানে তিনি শরীয়তপুর জেলার সহকারী সরকারী কৌঁসুলি (এজিপি)।

তৃতীয় ছেলে মো. মেহেদী হাসান প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি পাস করে বাংলাদেশ বেতারের কম্পিউটার অপারেটর (নিজস্ব শিল্পী) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ বেতার কল্যাণ সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।

চতুর্থ ছেলে ফরিদ আহমেদ ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এমকম পাস করেন। বর্তমানে মোহাম্মদপুর রেন্সিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রধান সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা।

পঞ্চম ছেলে অ্যাড. মুরাদ হোসেন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি পাস করে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নিয়মিত সদস্য হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত এবং জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকারী পরিষদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। এছাড়া মঞ্চ ও টেলিভিশনের যাদুশিল্পী, ফটোগ্রাফার এবং সাংবাদিক সঙ্গে জড়িত।

একমাত্র মেয়ে হুসেন আরা লাভলী বঙ্গবন্ধু `ল` কলেজ থেকে এলএলবি পাস করে লিগ্যাল হেল্প অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন।

রাহিলা খাতুনের ছোট ছেলে অ্যাড. মুরাদ হোসেন জানান, আমরা মাকে অনেক ভালোবাসি। আমার মা আমার গর্ব। আমার প্রিয় মায়ের সাহসিকতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে পরিবারে সুখ এসেছে। আর মায়ের কাজকে সহজ করেছেন বড় ভাই মো. আলমগীর মুন্সী।