• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

‘শিক্ষার্থীরা জ্ঞানার্জনে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে, লাশ হতে নয়’

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর ২০১৯  

রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, লাশ হয়ে হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নয়। কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর দায় একেবারে এড়াতে পারে না।’

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আচার্য মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘ডাকসু (ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে এমন সব কথা শুনি, যেগুলো আমার ভালো লাগে না। এর বেশি বলে আমি কাউকে হেয়-প্রতিপন্ন করতে চাই না। তবে তাদের কর্মকাণ্ড আমার ভালো লাগে না।’

তিনি বলেন, ‘তাদের এমন কিছু করা উচিত, যা সাধারণ ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করে। সেটা তাদের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সান্ধ্যকালীন (ইভিনিং) শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে। টাকার বিনিময়ে এই সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রম ভালো লাগে না বলে জানিয়েছেন দেশের রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য মো. আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করেছে। বিশ্বদ্যিালয়গুলো সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রমের অনিয়ম তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি শুনেছি, তাদের একটা বিষয় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস। এতে তাদের ২২টা কোর্স। প্রতি কোর্সে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। এতে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার ওপরে হয়। এর অর্ধেক শিক্ষকরা পায়, আর অর্ধেক বিভাগ পায়। বিভাগের টাকা কী হয় জানি না, কিন্তু শিক্ষকরা পাচ্ছে। আমি এটাও জানি, যাদের শুধু পিএইচডি আছে, শুধু তারাই ক্লাস নেয়।’

এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, বিশ্ববিদ্যালয় চলে জনগণের টাকায়। সুতরাং, এর জবাবদিহিও জনগণের কাছে।’

ডাকসু নির্বাচন করায় ঢাবি উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, ‘তবে আপনাকে আমি আরেকটু বলতে চাই, নির্বাচনের সময় কিছু কথা বা অপ্রীতিকর ঘটনা শুনেছি। আমি আশা করব, ভবিষ্যতে যখন আবার ডাকসু নির্বাচন হবে, তখন যাতে করে আরও সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে এই নির্বাচন হয়।’

অনুষ্ঠানে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আজকে আমি সবাইকে বলতে চাই, আমাদের সন্তানদের আমরা সেই শিক্ষা দানের চেষ্টা করি, যে শিক্ষা তাদের মধ্যে যুক্তিবাদিতা, বিবেক ও মানবতাবোধকে জাগ্রত করবে। ফলে তারা ভালো চিন্তা ও কাঙ্ক্ষিত মানবোচিত কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে।’


উপাচার্য বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মানুষ অন্য-বস্ত্র-বাসস্থানসহ তথাকথিত উন্নত জীবনের বস্তুগত সামগ্রী অর্জনের নিমিত্তে অধিক মুনাফা লাভের প্রয়োজনীয় বিদ্যালাভের পেছনে যতটা ছুটছে, মানবিকতা উন্নয়নমূলক শিক্ষা বিষয়ে ততটা নয়। আমাদের সামাজিক জীবনের যে অস্থিরতা, তরুণ সমাজের একাংশের যে বিপদগামিতার কথা আজ বলা হচ্ছে, এর অন্যতম কারণ এটি।’

তিনি বলেন, ‘প্রিয় স্নাতকবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত শিক্ষা ও জ্ঞান নিয়ে বাস্তবতার জীবনে তোমরা প্রবেশ করতে যাচ্ছ। এ পথ বন্ধুর। তবে দুর্লঙ্ঘনীয় নয়। এ পথ পাড়ি দিতে হবে তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, বিচক্ষণতা, ধৈর্য ও সৎ সাহস নিয়ে। তবে সুখের কথা হলো, বর্তমানে তোমরা যে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ, তা এখন আর চরম দারিদ্র্য-পীড়িত ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশ নয়। গত এক দশকে মাথাপিছু আয় প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে এখন দাঁড়িয়ে দুই হাজার ডলারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে ২০ হাজার ৭৯৬ শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করেছেন রাষ্ট্রপতি


জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক ও নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ অধ্যাপক ডক্টর তাকাকি কাজিতা সমাবর্তন বক্তা হিসেবে অংশ নেন। তাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সাইন্স’ ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে ৭৯ কৃতি শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৮টি স্বর্ণপদক, ৫৭ জনকে পিএইচডি, ছয়জনকে ডিবিএ এবং ১৪ জনকে এম ফিল ডিগ্রি দেয়া হয়।

এছাড়াও অধিভুক্ত সাত কলেজের রেজিস্ট্রেশনকৃত গ্রাজুয়েটরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু থেকে সরাসরি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।