• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার ৪ আসামি কারাগারে

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২০  

 

 

সাবেক সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আদালত মামলার চার আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। চার আসামি সাবেক পুলিশ সদস্য।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিশেষ জজের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ ইসমাইল হোসেনের আদালতে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়েছে। আদালত সোমবার আসামিপক্ষকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বিশেষ পিপি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

জামিন বাতিল হওয়া চার জন হলেন— সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, মো.আব্দুলাহ ও মমতাজ উদ্দিন।

দীর্ঘ ৩২ বছরের মাথায় এসে গত ১৪ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ২৪ জানুয়ারি ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ হিসেবে পরিচিত এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার ৩২ বছর পূর্ণ হবে। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির আশা, এর মধ্যেই আদালতে চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা হবে।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদীঘি ময়দানে সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে ২৪ জন মারা যান। আহত হন দু’শতাধিক মানুষ।

হামলায় নিহতরা হলেন— হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডিকে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও মো. শাহাদাত।

এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হত্যাকাণ্ডের সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করা হয়। এতে রকিবুল হুদাকে ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বহুল আলোচিত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের নির্দেশে সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় আরও তদন্তের মাধ্যমে মীর্জা রকিবুল হুদাসহ আট পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন প্যাট্রল ইনস্পেক্টর (পিআই) জে সি মন্ডল, পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, মো.আব্দুলাহ ও মমতাজ উদ্দিন।

আসামিদের মধ্যে রকিবুল হুদা, বশির উদ্দিন ও আব্দুস সালাম মারা গেছেন। জে সি মন্ডল পলাতক আছেন। বাকি চার জন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন।

আদালতে দুই দফায় আলোচিত এ মামলার চার্জ গঠন (দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত আকারে) করা হয়। প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ৫ আগস্ট ও দ্বিতীয় দফায় ২০০০ সালের ৯ মে ৮ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/৩২৬/৩০৭/১১৪/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০০০ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর ২০০১ সালের ১৭ মে থেকে ২০০৬ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মাত্র দু’জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র একবছরে সাক্ষ্যগ্রহণ হয় ১৩ জনের।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ওই বছরের ২৫ জুলাই তদন্তকারী কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন দেওয়ানের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারিক আদালত চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আর কোনো সাক্ষীকে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।

এ অবস্থায় ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি মামলাটি বিচারের জন্য আসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে। এই আদালতে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ নেতা গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড.অনুপম সেন, সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন ও হেলাল উদ্দিন চৌধুরীসহ ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

অভিযোগপত্রে উল্লিখিত ১৬৮ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ৫৩ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে।