• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

সরকারি সহায়তায় ভাসমান জীবন ছেড়ে গড়ে তুলছে স্থায়ী বসতি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ

যাযাবর জীবন ছেড়ে ডাঙ্গায় স্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে বেদে সম্প্রদায়ের ১২০টি পরিবারের সা‌ড়ে ৫ শতাধিক লোকজন। এদের মধ্যে প্রায় আড়াই শতাধিক লোক জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার হয়েছে। এদের ছেলে মেয়েরা সুযোগ পেয়েছে স্কুল, কলেজ, মক্তব ও মাদরাসায় লেখা পড়া করার। অনেকেই তাদের আদি পেশা ছেড়ে দিয়ে বেছে নিয়েছে চাকরি, দোকানপাট, মাছের ব্যবসা, কাপড়-চোপড়, ক্রোকারিজসহ বিভিন্ন মালামাল ফেরি করে বিক্রির কাজ। তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটছে। এদের ছেলে- মেয়েদের বিয়ে দিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে সর্ম্পক গড়ে তুলছে। জম্ম নিয়ন্ত্রন সম্পর্কেও এদের মধ্যকার অনেক পরিবার  সচেতন হয়েছে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ২৫/৩০ বছর পূর্বে বেদে সম্প্রদায়ের গুটি কয়েক পরিবার মুন্সিগঞ্জের বিক্রিমপুর থেকে এসে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের কীর্তিনাশা নদীর মুন্সিরহাট নামক স্থানে নৌকা রেখে এলাকায় সাপধরা, বানোর নিয়ে সাপ খেলা দেখানো, সিঙ্গা লাগিয়ে বাত বেথার বিষ নামানো, দাঁতের পোকা ফেলানো, পুকুর-ডোবা থেকে স্বর্ণ রুপা তোলা, তাবিজ-কবজ বিক্রি করাসহ বিভিন্ন ভাবে জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের ডোমসার গ্রামের  কীর্তিনাশা নদীর তীর ঘেসে নিজেরা জমি ক্রয় করে স্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে। গড়ে ওঠা বেদেদের স্থায়ী বসতির বেদে সর্দার আব্দুল ছাত্তার এর অধীনে ১২০টি পরিবার রয়েছে। তবে এখনো তাদের বড় শক্তি সাম্প্রতিক ঐক্য। সর্দারকে বেদেরা সবাই মেনে চলে। তবে অবসর সময় পুরুষেরা তাস খেলে ও নারীরা লুডু খেলে সময় কাটায়।

বেদে সর্দার আব্দুল ছাত্তার জানান, সাপ খেলা, ঝাড়-ফুক তাবিজ-কবজ বিক্রির ব্যবসা এখন মন্দ। মানুষ আর আগের মতো এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয় না। তাই কেউ কেউ বিকল্প পেশার সন্ধানে ছুটছে। 

তিনি আরও জানান, বেদে পরিবারগুলোতে প্রায় আড়াই শতাধিক ভোটার রয়েছে। নির্বাচনের সময় তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকে। এ বছর ভোটার হালনাগাদের সময় আরও অনেকেই ভোটার হওয়ার জন্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আ‌রিফ হো‌সেন ব‌লেন, বাব চাচারা যখন নৌকায় চ‌রে যাযাবর জীবন যাপন কর‌তেন, তখন আমরা ‌লেখাপড়ার সু‌যোগ পাই‌নি। ডোমসা‌রের স্থানীয় বা‌সিন্দা হ‌য়ে আমি অস্টম শ্রে‌ণি পর্যন্ত লেখাপড়া ক‌রে‌ছি। আমার এক ভাই শিক্ষিত হ‌য়ে আনসার এ চাক‌রি কর‌ছেন। শিক্ষার অভা‌বে আমা‌দের সমাজ পি‌ছি‌য়ে আছে। তাই আমা‌দের সন্তান‌দের পড়াশুনা ক‌রি‌য়ে শিক্ষিত ক‌রে অন্যান্য সমা‌জের সা‌থে মিল রাখ‌তে চাই।

আলআ‌মিন ব‌লেন, মানু‌ষের স্বর্ণ, রুপা পা‌নি‌তে প‌রে হা‌ড়ি‌য়ে গে‌লে তা পুকুর, খাল, ডোবা থে‌কে তু‌লে দেই। এ কাজ অনেক প‌রিশ্র‌মের। তাই সন্তান‌দের এ কাজ কর‌তে দিব না। লেখাপড়া করা‌বো।

সাপু‌রে আফসার সরদার ব‌লেন, আমা‌দের পূর্ব পুরু‌ষ‌দের কাজ হি‌সে‌বে সাপ খেলা দেখাই। আমার কা‌ছে কা‌লি জাইত, খইয়া জাইত, গোখড়া, অজাগরসহ বি‌ভিন্ন ধর‌নের সাপ আছে। সাপগু‌লো‌কে দুধ, ব্যাঙ, মাছ, মুর‌গি ও কবুত‌রের বাচ্চা খাওয়া‌তে হয়। তা‌তে অনেক টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু সেই হি‌সে‌বে খেলা দে‌খি‌য়ে আয় হ‌চ্ছে না। স্ত্রী সন্তান নি‌য়ে সংসার চালা‌তে কষ্ট হয়। ভাব‌ছি এ পেশা ছে‌ড়ে দেব।

‌ডোমসার ইউনিয়ন প‌রিষ‌দের চেয়ারম্যান মো. চাঁন মিয়া মাদবর ব‌লেন, বে‌দে সম্প্রদায়ের অনে‌কে জাতীয় প‌রিচয়পত্র পে‌য়ে‌ছে। ইউনিয়ন প‌রিষদ থে‌কে তা‌দের সব ধর‌নের সুযোগ সু‌বিধা দেয়া হ‌চ্ছে। মেম্বারের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্র‌তিব‌ন্ধি ভাতা দেয়া হ‌চ্ছে । তা‌দের ছে‌লে মে‌য়েরা যেন সুশিক্ষায় শি‌ক্ষিত হ‌তে পা‌রে আমরা তার খোঁজ খবর রাখ‌ছি। নদী পাড় হ‌য়ে যেন শিক্ষা‌র্থীরা খুব সহ‌জে প্র‌তি‌দিন স্কু‌লে যে‌তে পা‌রে তার জন্য তা‌দের নৌকার ব্যবস্থা কর‌ছেন জেলা প্রশাসক ম‌হোদয়। বে‌দেরা তাদের মূল পেশা ছে‌ড়ে লেখাপড়া ক‌রে বিকল্প পেশার সন্ধানে ছুটছে। সমা‌জে প্র‌তি‌ষ্ঠিত হ‌তে চেষ্টা কর‌ছে।

সদর উপ‌জেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান শেখ ব‌লেন, ‌বে‌দে সম্প্রদা‌য়‌দের জন্য সরকার বিভিন্ন ধর‌নের সু‌যোগ সু‌বিধা দি‌চ্ছেন। তা‌দের স্থায়ী করার জন্য জাতীয় প‌রিচয়পত্রর ব্যবস্থা ক‌রে‌ছেন। তা‌দের সন্তান‌দের শিক্ষা উপবৃ‌ত্তি দেয়া হ‌চ্ছে। পাশাপা‌শি জেলা প্রশাসন ও সমাজ সেবার পক্ষ থে‌কে নারী‌দের সেলাই প্র‌শিক্ষণ ও পুরুষ‌দের আইসি‌টি  প্র‌শিক্ষণের ব্যবস্থা করা হ‌য়ে‌ছে। তা‌দের সাবল‌ম্বি কর‌তে বি‌ভিন্ন ধর‌নের ঋণ দি‌চ্ছেন। তা‌দের শিক্ষার মান উন্নয়‌নের জন্য সরকার কাজ কর‌ছে।