• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

সোনালি ধানের ঝলকে কৃষকের মুখে হাসি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২০  

মাঠ জুড়ে সোনালি ধান। বিস্তীর্ণ হাওরের বুকে ঢেউ খেলছে। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে চারদিক। এতে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকদের মধ্যে। চলতি মৌসুমে জেলায় রোপা আমনের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুটিই অর্জিত হয়েছে। জেলায় উপশী, হাইব্রিড ও দেশি এই তিন জাতের আমনের চাষ হয়ে থাকে।

গত কয়েক বছর ফলন ভাল না হলেও এবার করোনার মধ্যেও আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রতিটি ধান গাছের থোকায় থোকায় প্রচুর পরিমাণে ধান হয়েছে। এছাড়া চলতি ধানের দরও পাওয়া যাচ্ছে ভালো।

অন্যান্য বছর উৎপাদিত ধান নিয়ে কৃষকদের বিপাকে পড়তে হত। দাম ভাল না পাওয়ায় উৎপাদিত ধান দিয়ে পরিবারের খরচ মিটানো দূরের কথা তাদের উৎপাদন খরচই উঠত না। জমির ধান তাদের পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। তবে এবারের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে নয়শ থেকে এক হাজার টাকা দরে। পাইকাররা বাড়ি বাড়ি আসছেন ধান কিনতে। উৎপাদিত ধানের মূল্য পেয়ে অনেক খুশি কৃষকরা।

জেলার বিভিন্ন ধানের জমিতে ঘুরে দেখা গেছে, দিগন্ত জুড়ে সোনলি ফসলের খেলা। হেমন্তের শীতল বাতাসে পাকা ধানগুলো দোল খাচ্ছে। একেকটি ধানের শীষ যেন কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জমি থেকে ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে। নতুন ফসল ঘরে তোলার উৎসব চলবে আরো দুই সপ্তাহ জুড়ে।  

বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধানের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি বাজার দরও এবার ভালো পাওয়া যাচ্ছে।  

কৃষক লাল মিয়া বলেন, আমি এ বছর ছয় কানি জমিতে রোপা আমন আবাদ করেছি। খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। প্রতি কানিতে প্রায় ১৪ মণ ধান পাওয়া যাবে। ধানের ফলন ও গুণ ভালো হওয়াই দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

অপর কৃষক ছমির উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছর ধান আবাদ করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। প্রতি মণ ধান বিক্রি করতে হয়েছে পাঁচশ থেকে সাড়ে পাচঁশ টাকা দরে। তবে এবার প্রতি মণ ধান বিক্রি করছি নয়শ থেকে এক হাজার টাকা দরে। আমাদের বাজারে যেতে হচ্ছে না। পাইকাররা জমি থেকেই ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষক সোয়াব মিয়া বলেন, করোনাকালে ঋণ নিয়ে আমি চার কানি জমিতে রোপা আমন আবাদ করেছি। প্রথমে চিন্তিত ছিলাম যদি ফলন ভালো না হয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। তবে ভালো ফলনে আশার সঞ্চার জাগিয়েছে। এভাবে সব সময় ভালো আবাদ হলে কৃষিকাজে আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে।  

জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলিত মৌসুমে জেলায় রোপা আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ৫০ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত ধান থেকে চাল হবে ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ মেট্রিকট্রন। কৃষিবিভাগ আশা করছে চলতি মৌসুমে আমন ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম করবে।

জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিউল আলম মজুমদার বলেন, সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ ধান কেনায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এতে করে কৃষকরা ধানের বাজার মূল্য ভালো পাচ্ছেন। সেইসঙ্গে যে সব কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন তারাও নতুন করে ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।