• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

সৎ প্রতিবেশী সৌভাগ্যের নিদর্শন

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৫ জুলাই ২০২০  

মানব সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো প্রতিবেশী। জিবরাঈল (আ.) আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে প্রতিবেশীর ব্যাপারে সর্বদা এত বেশি অসিয়ত করেছেন যে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার ধারণা হয়, শিগগিরই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিশ (উত্তরাধিকার) করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৪)

ইসলামে প্রতিবেশীর হককে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একজন সৎ প্রতিবেশীকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ মর্যাদা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন মুসলমানের জন্য প্রশস্ত বাসভবন, সৎ প্রতিবেশী ও আরামদায়ক বাহন সৌভাগ্যের নিদর্শন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪০৩২, আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৫)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে সঙ্গীদের মাঝে উত্তম সঙ্গী হলো সেই ধরনের ব্যক্তি যে তার নিজ সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহ তাআলার দৃষ্টিতে প্রতিবেশীদের মাঝে উত্তম হলো সেই ধরনের প্রতিবেশী যে তার নিজের প্রতিবেশীর কাছে উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪৪)

অতএব প্রতিবেশীর সঙ্গে কখনোই রূঢ় আচরণ করা যাবে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক হতে হবে ভ্রাতৃত্বের, ভালোবাসার। অথচ আজকাল শহুরে মানুষরা তো প্রতিবেশীকে চেনেও না। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ প্রতিবেশীর খোঁজখবর রাখলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সামান্য বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে বছরের পর বছর। অথচ সাহাবায়ে কেরাম তাঁদের অমুসলিম প্রতিবেশীর সঙ্গেও নম্র ব্যবহার করতেন। তাঁদের ঘরে মাঝে মাঝে উপহার পাঠাতেন। মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.)-এর জন্য তাঁর পরিবারে একটি ছাগল জবেহ করা হলো। তিনি এসে বলেন, তোমরা কি আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে (গোশত) উপহার পাঠিয়েছ? আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাঈল (আ.) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হলো যে, হয়তো শিগগিরই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯৪৩)

তাই দুই এক ইঞ্চি জমিজমা, পানি নিষ্কাশন কিংবা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে শত্রুতা না রেখে আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো মীমাংসা করে নিতে হবে। কারণ আমরা যেসব জিনিস নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শত্রুতা করি, জুলুম অত্যাচার করি, সেই জিনিসগুলো কিন্তু দুনিয়াতেই থেকে যাবে। কিন্তু আমাদের সবাইকে আল্লাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। এবং হিসাব দিতে হবে।

মানুষের হক আল্লাহ কখনো মাফ করে দেন না। ফলে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলো যেন আমাদের সারা জীবনের নেক আমলগুলোকে ধ্বংস করে না দেয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলা হলো ইয়া রাসুলুল্লাহ! অমুক নারী সারা রাত নামাজ পড়ে, সারা দিন রোজা রাখে, ভালো কাজ করে, দান-খয়রাত করে এবং নিজ প্রতিবেশীদের মুখের কথায় কষ্ট দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, সে জাহান্নামি। পুনরায় সাহাবিরা বলেন, অমুক নারী ফরজ নামাজ পড়ে, বস্ত্র দান করে এবং কাউকে কষ্ট দেয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে জান্নাতি। (আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৮)

উপরোক্ত হাদিসে উল্লিখিত নারীর এত আমল থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার কারণে আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে জাহান্নামি ঘোষণা দিয়েছেন। এতে বোঝা যায় প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা ইসলামে অধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমাদের সবার উচিত এই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়া। প্রতিবেশীর প্রতি সদয়  হওয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সৎ প্রতিবেশী হওয়ার তৌফিক দান করুন।