• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি, দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা যশোরে

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২৪  

তাঁতানো পোড়ানো রোদে দম বন্ধ অবস্থা এখন যশোরের প্রকৃতিতে। যশোরে শনিবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে ঘোষণা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুর ৩টায় যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া দফতর এ তাপমাত্রা রেকর্ড করে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, যশোরে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি মেলসিয়াস। যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। বৃহস্পতবিার (১৮ এপ্রিল) যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমকি ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী দু’একদিনের মধ্যে তাপ প্রবাহের পরিবর্তনের তেমন কোনো সুযোগ নেই। তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

তাপমাত্রা যাই হোক না কেন, যশোরে ঘরের বাইরে বের হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। পথচারীরা বলছেন, রাস্তায় বের হলে পুড়ে যেতে হচ্ছে। তাপে জ্বালা ধরছে সমস্ত শরীরে। যা এক অসহ্য অবস্থা। অধিকাংশ মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না।

বেশ কয়েকদিনের টানা তাপদাহের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। সেই সাথে অন্যান্য প্রাণীকূলও।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের খবরে গরম কমার কোনো লক্ষণ নেই। কবে নাগাদ যশোরাঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে তারও সুখবর মিলছে না। বরং দিন দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। এই অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। তীব্র গরমের কারণে শ্রমজীবী মানুষ বেশিক্ষণ কাজ করতে পারছেন না।

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে প্রচণ্ড গরমে শ্রমিকরা মালামাল লোড-আনলোড করতে হিমসিম খাচ্ছে। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালগুলোতে শিশু রোগীদের চাপ বেড়েছে সাংঘাতিকভাবে। এ অবস্থায় শিশুদের নিয়ে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোল বন্দর ও শার্শায় গরমে জনজীবন হাঁপিয়ে ওঠেছে। হাঁসফাঁস দশা হয় প্রাণীকূলের। আর তীব্র গরমের মধ্যে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা হয় সবার। বিশেষ করে এখনও যারা বোরো ধান ঝাড়া ও রোদে শুকানোর কাজ করছেন গরমে যেন প্রাণ যায় যায় অবস্থা।

দুপুরের দিকে তাপের দহন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে দুপুরের দিকে বন্দর এলাকায় মানুষজনের চলাফেরা বেশ খানিকটা কমে আসে। এদিকে, বিকেলের দিকে সূর্য্যের আগুন ঢালা কমে আসলেও গরম অব্যাহত থাকছে।

গরমের দাপট চরমে ওঠায় মৌসুমী ফলের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় লেগে আছে। গরম থেকে বাঁচতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে লেবুর শরবত, আখের রস, ডাব, কচি তালের শাঁস খেতে দেখা যায় পথচলতি মানুষকে। এছাড়া তরমুজ, বাঙ্গি, মতন রসালো ফলও বেশ বিক্রি হচ্ছে এখন। রোদের তেজ থেকে রক্ষা পেতে বহু মানুষকে মাথার উপর ছাতা ধরে চলাচল করতে দেখা গেছে। চৈত্র শুরুর পর থেকে যশোরে গরমের এমন দাপট চলছে।

এদিকে, তীব্র তাপদাহের মধ্যে যশোরাঞ্চলে পানি সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। অনেক জায়গায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। তার উপর বিদ্যুতের লোডশেডিং জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এই দুঃসহ অবস্থা গ্রামাঞ্চলে বেশি।
বিএডিসির সেচ বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য, যশোরাঞ্চলে পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ২০ থেকে ৩০ ফুট নেমে গেছে। যে কারণে অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি মিলছে না।

কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত টিউবওয়েলগুলোতে পানি পাওয়া যাবে না।

বেনাপোল চেকপোস্টের জি এম আশরাফ জানান, ওষ্ঠাগত গরমে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রখর রোদ থেকে ঘরে ফিরেও গরমে ছটফট করছেন সবাই। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। রাতের বেলাও থাকছে ভ্যাপসা গরম। এই গরম কোনভাবে সহ্য করার মতো নই। তাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি মাঠে যাননি।

বেনাপোল বাজারের চায়ের দোকানদার সাদেক জুনাব আলী জানান, প্রচন্ড গরমে দোকানে বসে থাকা খুবই কষ্টকর। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে চা বিক্রি কমে গেছে।

বেনাপোলের ইজিবাইক চালক আল আমিন জানান, শুক্রবার গাড়ি চালাতে পারলেও আজ শনিবার সকাল থেকে রোদের তীব্র গরমে কোন যাত্রী উঠছে না গাড়িতে। সকালের দিকে ট্রেন থেকে কয়েকজন যাত্রী নিয়ে চেকপোস্টে যান তিনি। আনুমানিক দুই কিলোমিটারের এই পথ পাড়ি দিতেই তিনি হাপিয়ে ওঠেন।

শার্র্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুস সালাম জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বেশির ভাগ শিশু ঠান্ডা জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ভাইরাল ফিভার’ বা মৌসুমি রোগ থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়াবেন। রোদে ঘোরাঘুরি করা যাবেনা। খোলামেলা ঠাণ্ডা পরিবেশে শিশুদের রাখা ও বেশি বেশি পান করাতে হবে। গরমের কারণে ডায়রিয়া রোগীও বেড়েছে। সচেতনতার বিকল্প কিছু নেই।

তিনি আরও জানান, গরমে বাড়ছে অস্বস্তি। কড়া রোদ ও আবহাওয়ার কারণে বয়স্ক মানুষ নানা ধরণের অসুখ-বিসুখে বিপর্যপ্ত করছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর, হিটস্ট্রোকে।