• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

মঠবাড়িয়ায় সূর্যমুখি চাষে কৃষকদের ব্যপক সাফল্য

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২৪  

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলায় মাঠগুলোতে দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার।
উপজেলায় সূর্যমুখী চাষ করে কাঙ্খিত ফলন পেয়ে খুশি চাষিরা। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের  বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখী চাষ করেছেন ৮৫০ জন কৃষক। তবে সূর্যমুখী চাষ বেশী করছেন সাপলেজা, আমড়াগাছিয়া ও বেতমোড় ইউনিয়নের কৃষকরা। মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি বিভাগ সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যমী কৃষকের হাত ধরে পরীক্ষামূলক ভাবে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের  ৪৭৭ হেক্টর জমিতে প্রথমবারের মতো উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের।
মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে। তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের।
উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের কালিকা বাড়ি গ্রামেন কৃষক ফজলুল হক (৫৬) জানান, তিনি প্রায় ২০ শতাংশ জমিতে প্রথমবার সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ভালো ফসলও হয়েছে। কিন্তু চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে সূর্যমুখী ফুল পাকতে শুরু করেছে কিন্তু তাঁদের কোনো প্রস্তুতি নেই। তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে সুযোগ-সুবিধা পায় না, সহযোগিতা পেলে আশা করছি লাভের মুখ দেখতে পারব। শুনেছি সূর্যমুখীর তেল স্বাদে, গুণে ভালো। দামও অনেক বেশি। তাই এ ফসল নষ্ট হতে দিতে চাই না।
বেতমোড় গ্রামের কৃষক আব্দুল জলীল (৬৩) বলেন,  আমি পাঁচ বছর ধরে জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। এটি খুবই লাভজনক একটি ফসল। কিন্তু চাষের জন্য কৃষি অফিস থেকে বীজ এবং সার পর্যাপ্ত পাচ্ছিনা। এ বছর সূর্যমুখী ফুলের বীজে খুবই সমস্যা হয়েছে। হাইসন-৩৩ বীজে তেমন ফসল পাচ্ছি না।
সাপলেজা ইউনিয়নের বাদুরতলী গ্রামের কৃষক সোহরাপ হোসেন (৫৮)  জানান, তিনি তাঁর বাড়ির পাশে  ১৯ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। এখন পরিবারের চাহিদা মিটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। তিনি আক্ষেপারে সাথে বলেন আমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিলে আমরা আরো ভালো মনের ফসল পেতাম।
মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, সূর্যমুখী এক দিকে মনোমুগ্ধকর ফুল অন্যদিকে লাভজনক ফসল। কৃষকদের বিস্তারিত জানিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করার পরিকল্পনা করি।  সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। তবে মিঠা পানির অভাবে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতি একর জমিতে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।