• বুধবার ২২ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৮ ১৪৩১

  • || ১৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

বাল্যবিবাহ বিয়ের বাধন ছেড়া রুমা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০১৮  


২০১৭ সালে বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার ইউনিয়নের কাইচকুড়ি গ্রামের আলমগীর আকন এর মেয়ে মেধাবী ছাত্রী রুমা আক্তার দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আর্থিক সংকটের কারণে তাকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। বিষয়টি ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ জানতে পেরে বাল্য বিয়ে বন্ধ করে তার লেখাপড়া করানোর দায়িত্ব গ্রহন করেন। সে ২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। আর্থিক সংকট সমাধানে তার পাশে এসে দাড়িয়েছেন তার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাজী তোফাজ্জল হোসেন, ইংরেজী শিক্ষক মকবুল হোসেন ও মজিবুর রহমান। তাকে সম্পূর্নরূপে আর্থিক সহায়তা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা যোগার করে দেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে সোমবার ২ ডিসেম্বর তার সহায়তাকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ এর সাথে দেখা করতে আসেন রুমা। সেখানে রুমা জানান, পিতার দারিদ্রতার কারনে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন এসএসসি পাশ করার পরেই বন্ধ হয়ে যচ্ছিল। আমার দরিদ্র পিতা আমার লেখাপড়ার খরচ যোগার করতে না পারায় ১৬ বছর বয়সে আমাকে বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করেছিলেন। সংবাদ শোনার পরে আমাদের ইউএনও স্যার আমাদের বাড়ি গিয়ে আমার বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। আমাকে সে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ভেদরগঞ্জ পাইলট স্কুল এন্ড কলেজে লেখাপড়া করানোর সকল দায়িত্ব গ্রহন করে। তার পাশাপাশি আমাদের কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রব মিয়া স্যার,  শওকত, জাকির, মোতালেব, আবু তালেব , মোক্তার ও মামুন স্যার আমাকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করেছে। এছাড়া হাই স্কুলে পড়া অবস্থায় তোফাজ্জল স্যার, মকবুল, মজিবুর ও সঞ্জিত স্যার আমাকে সহায়তা করেছে। যাদের সহযোগিতায় আমি আজ উচ্চ শিক্ষা দুয়ারে এসে দাড়িয়েছি। আমার সবচেয়ে বড় দুঃখের দিন ছিল যেদিন অর্থাভাবে আমার বাবা-মা আমাকে লেখাপড়া বন্ধ করে বিয়ে দেয়ার আয়োজন করেছিলেন। আমার সবচেয়ে সুখের দিন হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার পরে শত কষ্টের মাঝেও আমার বাবা-মায়ের মুখের হাসি দেখতে পাওয়া। নিজ গ্রামের পশ্চিম সিড্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পাশ করে ভর্তি হন সাজনপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। ২০১৬ সালে এসএসসি পাশ করে তিনি ভেদরগঞ্জ পাইলট মডেল স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমা আক্তার বলেন, আমি বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় আর আল্লাহর রহমতে আজকে যে স্থানে এসেছি সেখান থেকে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করে পিতা-মাতার পাশাপাশি জাতির প্রয়োজনে কিছু করতে চাই। আল্লাহ যেন আমার প্রত্যাশা পুরন করে তার জন্য সকলের দোয়া চাই।  
সাজনপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাজী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, রুমা আক্তার অত্যান্ত মেধাবী ও সম্ভাবনাময় এক ছাত্রী। অনেক দিন না খেয়ে বিদ্যালয়ে এসেছে। প্রাইভেটের টাকা দুরের কথা বেতন, পরীক্ষা ফি পর্যন্ত সে দিতে পারেনি। আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ওকে বিনা বেতনে পড়িয়েছে। আজ আমি গর্ব করছি ওর জন্য। কারণ সে আমাদের সম্মান রক্ষা করে উচ্চ শিক্ষার পীঠস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে সুযোগ করে নিয়েছে। এর পিছনে যার সবচেয়ে বেশী অবদান তিনি হচ্ছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ। তিনি ওর বাল্যবিবাহ বন্ধ না করলে আমাদের এ স্বপ্ন কোন দিন পুরন হতো না। আমরা রুমার পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জন্যও দোয়া করি। 
ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকলিমা বেগম লিপি বলেন, আমাদের উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত করার জন্য আমাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাতে আমাদের কিছুটা বেগ পেতে হলেও রুমার মতো সম্ভাবনা ময় জাতির সন্তানরা যখন ভালো কিছু করে একজন নারী হিসেবে আমি তখন নিজেকে ধন্য মনে করি। 
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ বলেন, বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে গেলে আমাদের নানান সমস্যার সম্মখিন হতে হয়। কিন্তু এই বেআইনী কাজটি সম্পন্ন হয়ে গেলে হাজারো রুমা আক্তারের স্বপ্নের অকাল মৃত্যু হবে। তাইতো আমি আমার নিজের জন্য কখনো মানুষের কাছে হাত পাতিনি। কিন্তু রুমার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে হাত পেতে সহায়তা নিয়ে ওর লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। সাজনপুর হাইস্কুলের শিক্ষকদের উদ্যোগে ও কয়েক জন দানশীলের সহায়তায় এবং আমার ব্যক্তিগত অর্থে রুমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার খরচ আপাতত সংকুলানা হয়েছে। আমাগী দিনে ওর লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার জন্য ভেদরগঞ্জের কৃতি সন্তান ডাঃ হেলাল সহ বেশ কয়েকজন হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমি আশা করছি এত মানুষের ভালোবাসা পেয়ে রুমা দেশ ও জাতির জন্য ভালো কিছু উপহার দিবে।