• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১  

বন্দে মায়া লাগাইছে, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, গাড়ি চলে না, আমি কুলহারা কলঙ্কিনীসহ অসংখ্য গানের স্রষ্টা বাউল শাহ আব্দুল করিমের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর)। কিংবদন্তীতুল্য এই শিল্পী ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই বাউল সম্রাট। তার বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান। দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আব্দুল করিমের সংগীত সাধনার শুরু ছোট বেলা থেকেই। তখন থেকেই একতারা ছিল তার নিত্যসঙ্গী। জীবন কেটেছে সাদাসিধেভাবে।

কমর উদ্দিন, সাধক রসিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহিম মোস্তান বকসের কাছ থেকে নেনে বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম। বাউল আব্দুল করিম সশরীরে থাকলেও তার গান ও সুরধারা কোটি তরুণসহ সব স্তরের মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।

শাহ আব্দুল করিম বাংলার লোকজ সংগীতের ধারাকে আত্মস্থ করেছেন অনায়াসে। ভাটি অঞ্চলের সুখ-দুঃখ তুলে এনেছেন গানে। নারী-পুরুষের মনের কথা ছোট-ছোট বাক্যে প্রকাশ করেছেন আকর্ষণীয় সুরে। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহর দর্শন থেকে।

বাউল শাহ আব্দুল করিম জীবিকা নির্বাহ করেছেন কৃষি কাজ করে। কিন্তু কোনো অভাবই তাকে গান থেকে বিরত রাখতে পারেনি। অসংখ্য গণজাগরণের গানের রচয়িতা বাউল শাহ আব্দুল করিম অত্যন্ত সহজ সরল জীবন যাপন করতেন। গানে-গানে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি লড়াই করেছেন ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে। এজন্য মৌলবাদীদের দ্বারা নানা লাঞ্ছনারও শিকার হয়েছিলেন তিনি।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, কাগমারী সম্মেলন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মানুষকে প্রেরণা যোগায় শাহ আব্দুল করিমের গান। গানের জন্য মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর্যও পেয়েছেন তিনি।

শাহ আব্দুল করিম লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন ১৬০০ এরও বেশি গান। সাতটি বইয়ে গ্রন্থিত আছে এসব গান। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে।

মৃত্যুর কয়েকবছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। পেয়েছেন একুশে পদক। শাকুর মজিদ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘ভাটির পুরুষ’ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র। এখনো সুবচন নাট্য সংসদ করিমকে নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা মহাজনের নাও নাটকের প্রদর্শনী করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

এছাড়া ২০১৭ শাহ আব্দুল করিমের জীবনভিত্তিক প্রথম উপন্যাস লিখেন সাইমন জাকারিয়া। নাম ‘কুলহারা কলঙ্কিনী’। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানের মধ্যে দিয়ে তাকে খুঁজতে প্রতিদিন ভক্ত ও স্বজনরা গানের আসর বসান। গানের মধ্যে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে চান ভক্ত অনুরাগীরা।

সাংস্কৃতিক কর্মী তাজকিরা হক তাজিন বলেন, গানের স্রষ্টা শাহ আব্দুল করিম আমাদের মাঝে না থাকলেও গানে আর সুরে তিনি এখনো বেঁচে আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন।

সাংস্কৃতিক কর্মী সনি চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, শাহ আব্দুল করিমের গান সঠিক সুরে সঠিকভাবে গাওয়া, গানগুলো সংরক্ষণ করা এবং তার নামে একটি একাডেমি নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিন ধরে সাংস্কৃতিক কর্মীরা জানিয়ে আসলেও এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সেই জন্য আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা হতাশ। আমরা জোর দাবি জানাই দ্রুত যাতে করিম একাডেমি নির্মাণ করা হয়।

সাংস্কৃতিক কর্মী সোহান আহমেদ বলেন, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আগে তার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমরা জোর দাবি জানাই শাহ আব্দুল করিমের নামে একটি একাডেমি নির্মাণ করে তার সব গান সংগ্রহ করে রাখা হয়।

সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামছুল আবেদীন বলেন, আব্দুল করিম ছিলেন বাঙালি জাতির একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক। তিনি শুধু প্রেমের গানই লেখেননি তিনি গরিব-দুঃখী মানুষের সঙ্গে ছিলেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হবে। তার নামে একটি একাডেমি স্থাপনের কাজ চলছে। জমি নির্ধারণ প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা আশা করছি শিগগিরই শাহ আব্দুল করিম একাডেমির কাজ শুরু করতে পারবো।