• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

মুক্তিযোদ্ধা ভাগীরথীকে হত্যা করে পাকসেনারা

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১  

১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল সোমবার। এদিন সকালে মুক্তিযোদ্ধাদের চর ভিক্ষুকরূপী পিরোজপুর বাগমারার মুক্তিযোদ্ধা ভাগীরথী সাহা পাকিস্তানী বর্বর বাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে পিরোজপুর শহরে এলে রাজাকাররা তাকে ধরে ফেলে। পাক ক্যাপ্টেন এজাজ সুবেদার সেলিমকে নির্দেশ দেয় সবার সামনে ভাগীরথীকে হত্যা করার। এ নির্দেশ পাওয়ার পর দু’জন সেপাই ভাগীরথীর দুই হাত বেঁধে তাকে মোটর সাইকেলের সঙ্গে বেঁধে দেয়। সুবেদার সেলিম মোটর সাইকেল চালিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়কে ভাগীরথীকে টেনে হিঁচড়ে ভাগীরথীকে হত্যা করে এবং তার প্রাণহীন নিথর দেহটি বলেশ্বর নদে নিক্ষেপ করে।

মুক্তিযোদ্ধার একটি দল ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহ মাগুরা অঞ্চলের কালীগঞ্জ-আড়পাড়া সড়কের শালিখার তালখড়ি গ্রামে পৌঁছলে খবর পেয়ে রাজাকার ও পাকবাহিনী দলটির উপর হামলা করে। সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হন ৭ মুক্তিযোদ্ধা। শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি খালে গর্ত খুঁড়ে গণকবর দেয় হানাদারেরা।

এদিন সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে ১১টা পর্যন্ত নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানাধীন করিমপুর, রামহরিতালুক, দেবীপুর ও উত্তর চাকলা গ্রামে রাজাকার আমির আহম্মেদ ওরফে আমির আলী, আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুর, ইউসুফ আলি, জয়নাল আবেদীন, আব্দুল কুদ্দুসসহ ২০/২৫ রাজাকার ও ৭০/৭৫ পাকিস্তানী সেনা আনুমানিক ৩০০ নিরীহ নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে আটক করে। তাদের মধ্য থেকে সনাক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা আহম্মেদ, আবুল কালাম ওরফে কালাসহ অন্তত ১১ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের বাড়িসহ অসংখ্য বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।

৩ নম্বর সেক্টরের লে. হেলাল মোরশেদের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী আখাউড়া-সিলেট রেলওয়ে লাইনে মুকুন্দপুরের কাছে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মাইন পেতে তার সঙ্গে বৈদ্যুতিক তার যুক্ত করে ৩০০ গজ দুরে রিমোট কন্ট্রোল স্থাপন করে অবস্থান নেয়। পাকবাহিনীর এক কোম্পানি সৈন্য বোঝাই একটি ট্রেন নিরাপত্তার জন্যে প্রথমে বালির বস্তা ভর্তি দুটি বগিসহ অগ্রসর হয়ে মাইনের উপরে এলে বস্তা ভরা বগি পেরিয়ে যাবার পর মুক্তিযোদ্ধারা সুইচ টিপে মাইন বিস্ফোরণ করে। এতে ইঞ্জিনসহ ট্রেনটি বিধ্বস্ত হয় এবং দুইজন অফিসারসহ ২৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধে বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ায় ট্রেন ধ্বংস সম্ভবত এটাই প্রথম। কুমিল্লার ফতেহপুরের কাছে মুক্তিবাহিনী একটি রেলসেতু উড়িয়ে দেয় ফলে লাকসাম-ফেনী রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সিলেটে মুক্তিবাহিনীর ৫০ জন যোদ্ধার একটি দল পাকসেনাদের শাহবাজপুর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। ১০ মিনিট পর পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে ১৫ জন পাকসৈন্য ও রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী অক্ষত অবস্থায় নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।

মুক্তিবাহিনী খুলনার হরিনগরে পাকবাহিনীর একটি গানবোট ও সৈন্য বোঝাই কয়েকটি লঞ্চকে এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে পাকবাহিনীর গানবোট আরোহী নিহত এবং রাডার এন্টিনা ধ্বংস হয়। পরে প্রচন্ড গোলা বিনিময়ে পাকসেনাদের ৪টি লঞ্চ ডুবে যায়। কুষ্টিয়ায় একটি ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও ২২ জন রাজাকার অস্ত্রসহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

৭ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর রামচন্দ্রপুর প্রধান ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ২০ জন সৈন্য ও ১২ জন রাজাকার নিহত এবং ১৩ জন সৈন্য আহত হয়। অপরপক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ও দুইজন আহত হন। ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী বানারীপাড়ায় পাকবাহিনীর কয়েকটি লঞ্চ আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৩টি লঞ্চ পানিতে ডুবে যায় এবং ৪০ জন পাকসৈন্য নিহত হয়।

এদিন মুক্তিফৌজের উর্ধতন কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাপ্রধান লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরার গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একসঙ্গে গেরিলা ও নিয়মিত সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভারতীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয়রা আরও গভীরভাবে যুক্ত হল।

কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধি এইচ সি টেম্পেল্টন বলেন, ‘আমাদের দেশের পক্ষ থেকে কমনওয়েলথ এবং যুক্তরাজ্যকে পূর্ব পকিস্তানের নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য অনুরোধ করছি। আমরা বিশ্বাস করি তাদের সরকার স্বীয় জনগণের অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সঠিক নীতি অবলম্বন করবে।’

কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে গায়ানা প্রতিনিধি বিসেম্বর বলেন, আমি আন্তর্জাতিক মানদন্ডে এটা বিশ্বাসও করি না আবার অবিশ্বাসও করি না যে, আমাদের স্বাধীন কোন অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে কি না। কিন্তু আমি এটাই পেশ করছি মি. সভাপতি, যে যেখানে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, যেখানে মানবতার অবমূল্যায়ন এবং যেখানে নৈতিকতার বিসর্জন হয়ে পড়ে এবং একই সঙ্গে সকল আন্তর্জাতিক নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়, তখন এটা আমাদের মতো সকল কমনওয়েলথ সদস্যের একটি অধিকার ও কর্তব্য হয়ে পড়ে এমন কোন সভায় নিজেদের মত ব্যক্ত করার। 

মি. চেয়ারম্যান, পাকিস্তানে বসবাসকারী মানুষের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমরা কীভাবে এই সভা পাকিস্তানে করার চিন্তা করতে পারি যেখানে নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান জয়লাভ করার পরেও পাকিস্তানে কোনো সরকার গঠন করার কোনো অনুমতি পায় না। ভারত এবং পাকিস্তানে যা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত, এর থেকে দুঃখজনক ঘটনা বর্তমান পৃথিবীতে আর কিছু নেই। সুতরাং মি. চেয়ারম্যান, আমরা যারা এখানে ৩০টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, তাদের কোনভাবেই এই ভয়াবহ নৃশংসতার নিন্দা প্রকাশ থেকে পিছিয়ে আসা উচিত নয়। নিন্দা প্রকাশ করা উচিত তাদের প্রতি যারা গণতান্ত্রিক বিধিবিধান লঙ্ঘন করেছে এবং একই সঙ্গে লঙ্ঘন করেছে সংবিধানকে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপরে বয়ে এনেছে সীমাহীন নৃশংসতা ও ভয়াবহ দুর্ভোগ।

এদিন বাংলাদেশে হানাদারদের গণহত্যার প্রতিবাদে লাগোস এবং নাইজিরিয়ার ইসলামাবাদ মিশনের চেন্সরি প্রধান মহিউদ্দিন জোয়ার্দার চাকরিতে ইস্তফা দিয়া লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনে যোগদান করেন।

একই দিনে ম্যানিলায় ইসলামাবাদের রাষ্ট্রদূত খুররম খান পন্নী ইসলামাবাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে তিনি রাষ্ট্রদূত হিসেবে ম্যানিলা গমন করেন। বাংলাদেশের সমর্থনে এ পর্যন্ত বিদেশে ইসলামাবাদ কূটনৈতিক মিশনসমূহের ৪০ জন কূটনীতিবিদ ইসলামাবাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। করাচীতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঘটনাবলী নিয়ে তিনঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।