• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

কৃষি বিভাগের সহায়তায় রঙ্গিনকপি চাষে সফল ভেদরগঞ্জের চাষীরা

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ আল্লাহ রহমত, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা আর নিজের আত্মবিশ্বাসে উচ্চ মূল্যের সবজি ও ফল আবাদ করে ঘুরে দাড়িয়েছে বাবুল দালাল। শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার  রামভদ্রপুর  ইউনিয়নের মহিষকান্দি গ্রামের সফল কৃষক বাবুল দালালের সাফল্য গাঁথা প্রচার ও প্রকাশ করেছে দেশের একাধিক গণমাধ্যম।

জানা যায়, ৯ বছর পূর্বে  চাকুরী ছেরে গ্রামে এসে বেকার হয়ে পরে বাবুল। সে কঠিন সময়ে  পরিচয় হয় ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারির কৃষি অফিসার মামুনুর রশিদ হাসিব এর সাথে।

পরে মামুন তাকে নিয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের তৎকালিন কৃি অফিসার শাহ্ মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন এর সামনে নিয়ে আসেন। কৃষি অফিসার  ও মামুনের পরামশ্যেই তখন কৃষি কাজে যোগ দেয় বাবুল।

এর পরে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।  তার কর্মগুনের জন্য বর্তমান কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলাম ও তার প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছেন সহায়তা হাত।

২০১৫ সালে প্রথমে ১ বিঘা জমিতে উচ্চ মূল্যের গ্রীষ্ম কালিন টমেটু আর তরমুজ চাষ দিয়ে তার যাত্রা শুরু। ৯ বছরের ব্যবধানে  বাবুল এখন তার জমির পরিধি বাড়িয়ে  করেছেন ২৯ বিঘা। তার কৃষি খামারে রয়েছে থাইপেয়ারা,বারি মাল্টা, কার্টিমন আম, বারো মাসি আম,বলসুন্দরীকুল, ভারত সুন্দরী কূল,সিডলেস লেবু, সুগন্ধী লেবু । সবজির মধ্যে রয়েছে, লাউ, বেগুন,সীম,বরবটি,টমেটু, পেপে, কলা আর এবার ব্যাক্তি সহায়তায়  উচ্চ মূল্যের রঙ্গিন ফুলকপি,পাতা কপি, দেশী কপি, ব্রোকলি,লেটুসপাতা,ক্যপসিক্যামসহ উচ্চমূল্যের

বিদেশী জাতসহ প্রায় ১০ রকম সবজি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাবুল। তার মতে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগে করা কপি ও ক্যাপসিক্যাম আয় করবেন ১লক্ষ ৩০ হাজার থেকে দের লক্ষ টাকা।  তিনি ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা আয়ের স্বপ্ন তার।

চাষী বাবুল দালাল জানান, আমার কৃষি খামারে আবাদ করা সবটুকু জমিই লিজে( ভাড়ায়) নেয়া। নিজের কোন জমি নাই। আল্লাহ রহমত, পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তার গুনে প্রতি বছরই আমি কৃষি অফিসে সহায়তা নতুন নতুন জাত  আর উচ্চ মূল্যে সবজি ফসল আবাদ করে থাকি।

তারই অংশ হিসেবে ভেদরগঞ্জে আমিই প্রথম আবাদ করেছি থাই পেয়ারা,গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্লাকবেরী তরমুজ,বারি মাল্টা,কার্টিমন আম, বারো মাসি আম,বলসুন্দরী কুল, সিডলেস লেবু,সুগন্ধী লেবু সবই প্রথম শুরু করেছি।

আর এবার কৃষি অফিসের স্যার ও মামুন ভাইয়ের ব্যাক্তি সহায়তায়  উচ্চ মূল্যের রঙ্গিন ফুলকপি, রঙ্গিন পাতা কপি, দেশী কপি, ব্রোকলি,লেটুসপাতা,ক্যপসিক্যামসহ উচ্চমূল্যের বিদেশী জাতসহ প্রায় ১০ রকম সবজি চাষ করেছি।

আমি ছাড়াও তিনজন নিয়মিত শ্রমিকসহ প্রায় ২৫ জনের  কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এ কৃষি খামারে। আমার সাফল্য গাঁথা ছরিয়েছে দেশে বিভিন্ন  টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে মাধ্যমে।  তাতে আমার ভাগ্যের  কোন পরিবর্তন হয়নি। পাইনা ঋণ সহায়তা। নিজস্ব জমি না থাকায় উচ্চ  হারে মহাজনি ঋন নিতে হয়। ফসলের ক্ষতি হলে নিজেকেই মাশুল টানতে হয়।  আমি কৃষি বিভাগসহ সকলে সহায়তা পেলে আল্লাহর রহমতে ভালো কিছু করার প্রত্যাশা রাখি ।

সবজি নিতে আসা এলাকাবাসী   জসিম ঢালী জানান, বাবুল দালাল তার পরিশ্রম দিয়ে আমাদের এলাকায় নিত্য নতুন ফল ও সবজি আবাদ আমাদের তাক লাগিয়ে দেন। সে জৈব সার আর বিষমুক্ত ফসল আবাদ করায় আমরা জমি থেকে সবজি কিনে নেই। তার মতো পরিশ্রমি মানুষের জন্য আমরা দোয়া করি।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি অফিসার মামুনুর রশিদ হাসিব বলেন, বাবুল দালাল একজন সম্ভবনাময় কৃষক। আমরা তার জন্য গর্বিত। তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা দেয়া গেলে  তিনি কৃষিতে আরো অনেক বেশী অবদান রাখতে পারবেন। আমরা  বা ব্যাংক তাকে সহায়তা করতে না পারার কারণ হচ্ছে  তার নিজস্ব কোন জমি নেই।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলাম বলেন, বাবুর দালাল,অত্যান্ত পরিশ্রমি ও আন্তরিক কৃষক। তাকে দিয়ে আমরা এ বছর ব্যাক্তি উদ্যোগে পরীক্ষা মুলক ভাবে রঙ্গিন কপি ও ক্যাপসিক্যাম চাষ করিয়েছি। তাতে তার ব্যাপক সাফল্য এসেছে। আমি বিশ্বাস করি বাবুলে মতো কৃষক আমাদের জন্য গৌরবের।তাকে আমরা সব ধরনে সহায়তা দিয়ে থাকি।