• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

নবী-রাসূলদের ব্যাপারে একজন মুসলিমের যে বিশ্বাস রাখতে হবে

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৪ জানুয়ারি ২০২৪  

পৃথিবীর প্রথম মানুষ ছিলেন আদিপিতা হজরত আদম আলাইহিস সালাম। তার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানবজাতির বিস্তার ঘটিয়েছেন, একইসঙ্গে মানুষকে হেদায়েতের আদিপিতাকে নবুওয়ত দিয়েছিলেন আল্লাহ তায়ালা। এরপর প্রতি যুগে সব মানুষের জন্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। নবুওয়তের এই ধারাবাহিকতা শেষ হয়েছে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে।

কোরআনে নবী-রাসূল পাঠানোর বর্ণনা

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,

 وَ لَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ کُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ اجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ ۚ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ هَدَی اللّٰهُ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَیۡهِ الضَّلٰلَۃُ ؕ فَسِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَانۡظُرُوۡا کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُکَذِّبِیۡنَ

আর অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। অতঃপর তাদের কিছু সংখ্যককে আল্লাহ্‌ হিদায়াত দিয়েছেন আর তাদের কিছু সংখ্যকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল; কাজেই তোমরা যমীনে পরিভ্রমণ কর অতঃপর দেখে নাও মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কী হয়েছে। (সূরা নাহল, (১৬), আয়াত, ৩৬)

অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন,

رَبَّنَا وَ ابۡعَثۡ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِکَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ

হে আমাদের রব! আর আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসূল পাঠান(১), যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করবেন(২); তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (সূরা বাকারা, (২), আয়াত, ১২৯)

পবিত্র কোরআনের আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,

عٰلِمُ الۡغَیۡبِ فَلَا یُظۡهِرُ عَلٰی غَیۡبِهٖۤ اَحَدًا اِلَّا مَنِ ارۡتَضٰی مِنۡ رَّسُوۡلٍ فَاِنَّهٗ یَسۡلُکُ مِنۡۢ بَیۡنِ یَدَیۡهِ وَ مِنۡ خَلۡفِهٖ رَصَدًا  لِّیَعۡلَمَ اَنۡ قَدۡ اَبۡلَغُوۡا رِسٰلٰتِ رَبِّهِمۡ وَ اَحَاطَ بِمَا لَدَیۡهِمۡ وَ اَحۡصٰی کُلَّ شَیۡءٍ عَدَدًا


‘তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না, তাঁর মনোনীত রাসুল ছাড়া। সে ক্ষেত্রে আল্লাহ রাসুলের সামনে ও পেছনে প্রহরী নিযুক্ত করেন, রাসুলগণ তাঁদের প্রতিপালকের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন কি না জানার জন্য। রাসুলদের কাছে যা আছে তা তাঁর জ্ঞানগোচর এবং তিনি সব কিছুর বিস্তারিত হিসাব রাখেন।’ (সূরা জিন, (৭২), আয়াত, ২৬-২৮)

এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছি, আমার পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দোয়া, ঈসা আলাইহিস সালামের সুসংবাদ এবং আমার মা স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তার থেকে একটি আলো বের হল, যে আলোতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ, ৫/২৬২)

পৃথিবীতে মানুষের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন সবাই সত্য। সবার প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস রাখা একজন মুমিনের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ‍ওয়াসাল্লামের উম্মত হিসেবে একজন মুসলিমের জন্য নবী-রাসূলদের সম্পর্কে যে বিশ্বাস রাখতে হবে এখানে তুলে ধরা হলো-

নবী-রাসূলদের ব্যাপারে একজন মুসলিমের বিশ্বাস যেমন হবে

>> নবী-রাসূলগণ নিষ্পাপ। তাদের মাধ্যমে কোনো পাপ সংঘটিত হয় না।
>> নবীগণ মানুষ, তারা খোদা বা খোদার পুত্র নয় এবং তারা খোদার রূপান্তর (অবতার) নন, বরং তারা আল্লাহ তায়ালা প্রতিনিধি ও নায়েব। কোরআনের বর্ণনা অনুসারে তারা মানুষ ও জিন জাতিকে হেদায়েতের জন্য দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছেন।

>> নবী-রাসূলগণ আল্লাহ তায়ালার বাণী হুবহু পৌঁছে দিয়েছেন।
>>পৃথিবীতে নবীদের আগমনের ধারাবাহিকতা আদিপিতা হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু হয়েছে। এবং শেষ হয়েছে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে।

>> আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং তিনি খাতামুন্নাবী অর্থাৎ তার পরে আর কোনো নবী আসবেন না। অন্য কেউ নবী দাবি করলে সে ভণ্ড ও কাফের।

>> নবী-রাসূলগণ কবরে জীবিত। আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কবরে জীবিত আছেন। তার রওজায় সালাম দিলে তিনি শুনতে পান এবং উত্তর প্রদান করে থাকেন।

অন্য কোনো স্থান থেকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লামের প্রতি দরূদ সালাম পাঠ করা হলে নির্ধারিত ফেরেশতারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তা পৌঁছিয়ে দেন।

>> হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত যত নবী-রাসূল এসেছেন তাদের সবাই হক ও সত্য নবী-রাসূল ছিলেন। সবার প্রতিই ঈমান রাখতে হবে।

এ বিশ্বাসও রাখতে হবে যে, আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমনের পর অন্য সব নবীর শরীয়ত রহিত হয়ে গিয়েছে, এখন শুধু হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত ও তার আনুগত্য আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য।

>> নবী-রাসূলদের সত্যতা প্রমানের জন্য অনেক সময় তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। এই অলৌকিক ঘটনাগুরোকে মুজিযা বলা হয়। নবী-রাসূলদের পক্ষ থেকে সংঘটিত এই মুজিযাগুলো বিশ্বাস করাও ঈমানের অংশ।