• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

খন্দক যুদ্ধে প্রিয়নবী সা.-এর গোয়েন্দা সাহাবি ছিলেন যিনি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪  

হজরত হুজাইফা ইবনে ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর বাবা হাসাল ইবনে জাবির এবং মা রাবাহ বিনতু কাব ইসলামের প্রথম যুগে মুসলমান হন। মা-বাবার সঙ্গে তিনি নিজেও ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলিম মা-বাবার কোলেই বেড়ে ওঠেন তিনি। হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর উপাধি ছিল সাহিবুস সির। তিনি অন্যতম একজন সাহাবি ছিলেন।

ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদর যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। তবে উহুদ এবং খন্দকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। খন্দক যুদ্ধে তার অবদান ছিলো গুরুত্বপূর্ণ।

কুরাইশরা সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে মদিনা অবরোধ করে রেখেছিল। হঠাৎ এমন প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি বইতে শুরু হলো যে, তাদের তাবুর রশি ছিড়ে তাবু ছ্ন্নিভিন্ন হয়ে গেল, হাঁড়িপাতিল উল্টে গেল এবং হাড় কাঁপানো শীত আরম্ভ হলো।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের অবস্থান নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, তিনি তাদের বাহিনীর অভ্যন্তরে কাউকে পাঠিয়ে তাদের অবস্থা জানতে চেয়েছিলেন। এ দুঃসাহসী অভিযানের জন্য তিনি হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নির্বাচন করলেন।

এই অভিযান সম্পর্কে সিরাতের গ্রন্থগুলোতে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি বর্ণনামতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লাম সাহাবিদের বললেন, ‘যদি কেউ মুশরিকদের খবর নিয়ে আসতে পারে, তাকে আমি কিয়ামতের দিন আামর সাহচর্যের খোশখবর দিচ্ছি।

প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের কারণে কেউ এমন দুঃসাহসিক অভিযানের সাহস পেল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার এই কথা উচ্চারণ করলেন, কিন্তু কোনো দিক থেকে সাড়া পেলেন না। চতুর্থবার তিনি হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নাম ধরে ডেকে বললেন, তুমি যাও খবর নিয়ে এসো। আল্লাহর রাসূল নাম ধরে ডাকার পর আদেশ মেনে অভিযানে গেলেন হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

অন্য একটি বর্ণনায় হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজেই বলেছেন, ‘ আমরা সে রাতে কাতারবন্দী হয়ে বসেছিলাম। আবু সুফইয়ান ও মক্কার মুশরিক বাহিনী ছিল আমাদের উপরের দিকে, আর নিচে ছিল বনী কুরাইজার ইহুদি গোত্র। এ সময় প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি, শৈত্যপ্রবাহ বইছিল। বাতাসের শব্দ ছিল বাজ পড়ার শব্দে মতো। এমন ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার ছিল যে, আমরা আমাদের নিজের আঙ্গুল পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছিলাম না। এই মুর্হুতে আমাদের নারী ও শিশুদের নিয়ে আমরা শঙ্কিত ছিলাম। এমন দুর্গোগপূর্ণ রাত আমাদের জীবনে আর কখনো আসেনি।

এমন শীতের রাতে আমার গায়ে একটি চাদর ছাড়া আর কিছু ছিল না। চাদরটি ছিল আমার স্ত্রীর। তা খুব টেনেটুনে হাঁটু পর্যন্ত পড়ছিল। এ সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন। বললেন, কুরাইশদের অবস্থা এখন শোচনীয়, তুমি তাদের শিবিরে গিয়ে আমাকে তাদের খবর এনে দেবে।

আমি ছিলাম সবার থেকে ভীত এবং শীতকাতর। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! সামনে পিছনে, ডানে-বামে ওপর নিচে সব দিক থেকে তুমি তাকে হিফাজত করো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়া শেষ হতেই আমার সব ভয় দূর হয়ে গেল, শীতের জড়তাও কেটে গেল। আমি কুরাইশদের খবর সংগ্রহ করতে বেরিয়ে পড়লাম।

আমি বেরিয়ে পড়ার পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পেছন থেকে আবার ডেকে বললেন, হুজাইফাং আমার কাছে ফিরে না এসে তুমি তাদের আক্রমণ করবে না।

ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকারে আমি চুপিসারে কুরাইশ শিবিরে প্রবেশ করে তাদের সঙ্গে এমনভাবে মিশে গেলাম যেন আমি তাদেরই একজন। আমি পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরে আবু সুফিয়ান ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন। বললেন,

‘হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আমি তোমাদের একটি কথা বলতে চাই। কিন্তু আমার আশঙ্কা হচ্ছে তা মুহাম্মদের কাছে পৌঁছে যায় কিনা। তোমরা প্রত্যেকেই নিরেজ পাশের লোকটির প্রতি লক্ষ্য রাখো’।

আবু সুফিয়ান একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার পাশের লোকটির হাত মুট করে ধরে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কে? সে জবাব দিলো, আমি অমুকের ছেলে অমুক।

 আবু সুফিয়ান বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়, তোমরা কোনো গৃহে নিরাপদ নও। আমাদের ঘোড়াগুলো মরে গেছে, উটের সংখ্যা কমে গেছে, মদিনার ইহুদি গোত্র বনু কুরাইজাও আামদের ছেড়ে গেছে। তাদের যে খবর আমাদের কাছে এসেছে তা সুখকর নয়। কেমন ঝড়ের কবলে পড়েছি তা তো তোমরা দেখতেই পাচ্ছো। আমাদের হাড়িও নিরাপদ নয়। আগুনও জ্বলছে না। সুতরাং চলো ফিরে যাই, আমি চলে যাচ্ছি। একথা বলে তিনি উটের রশি খুললেন এবং পিঠে চড়ে তার গায়ে আঘাত করলেন। উট চলতে শুরু করল।

হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আমাকে আক্রমণ করতে নিষেধ না করতেন তাহলে একটি মাত্র তীর মেরে তাকে আমি হত্যা করতে পারতাম।

এরপর আমি ফিরে এলাম। এসে দেখলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ পড়ছিলাম। নামাজ শেষে আমি তাকে সব জানালাম। তিনি খুশি হলেন এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন।  

(সহহি মুসলিম, ২/৮৯, তারীখু ইবনে আসাকির, ১/৯৮, সীরাতু ইবনে হিশাম, ২/২৩১, হায়াতুস সাহাবা, ১/৩২৮, সুওয়ারুন মিন হায়াতিস সাহাবা, ৪/১২৯, আসহাবে রাসূলের জীবনকথা, ৩/২২৩)