• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ফিরে আসবোই: শেখ হাসিনা জনগণের শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি: শেখ হাসিনা আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক ৭ মে: গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের সংগ্রামী জননেতা : প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় ম্যাচ বাঁচাল ভারত

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২১  

সমীকরণ ছিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে। ম্যাচ জিততে ৯৮ ওভার থেকে নিতে হতো ৮টি উইকেট। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই প্রথমটি নিয়ে সম্ভাবনা আরও উজ্জল করে তারা। কাজ কঠিন হয় ভারতের জন্য। ম্যাচ জিততে দিনের শুরুতে তাদের লক্ষ্য ছিল ৩০৯ রান। অথবা পরাজয় এড়াতে খেলতে হতো পুরো ৯৮ ওভার। যা সফলতার সঙ্গেই করে দেখিয়েছে ভারত।

টেস্ট ক্রিকেটে সাধারণত শুরুর দিনগুলোতেও হয় না ৩০৯ রান। সেখানে শেষদিনের ভাঙাচোরা উইকেটে এটি করতে চাওয়া রীতিমতো দুঃসাহসই হতো। তার ওপর ইনজুরির কারণে রবীন্দ্র জাদেজা ছিটকে যাওয়ায় ভারতের হাতে উইকেট ছিল মূলত ৭টি। এর মধ্যে দিনের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে।

ফলে দিনের শুরু থেকেই ম্যাচ বাঁচানোর যে কঠিন চাপ, তা বেশ ভালোভাবেই চলে আসে ভারতের ওপর। আর এ কঠিন চাপের মুখে দৃঢ়তা ও ধৈর্য্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছেন চেতেশ্বর পুজারা, হানুমা বিহারি, রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা। অন্যদিকে হাত খুলে খেলে অসিদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছেন রিশাভ পান্ত।

তাদের এ ব্যাটিং নৈপুণ্যে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির সিডনি টেস্টটি ড্র করতে পেরেছে ভারত। যেটিকে বলা যায় জয়ের সমতূল্যই। কেননা এ ম্যাচটি ড্র করতে চতুর্থ ইনিংসে তাদের খেলতে হয়েছে ১৩২ ওভার। অস্ট্রেলিয়ানদের সবরকমের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে পুরো ওভার খেলেছে ভারত, মাঠ ছেড়েছে ড্রয়ের সন্তুষ্টি নিয়ে।

পরিস্থিতি কখনও অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়ের মতো অবস্থায় যায়নি। তবে আজ (সোমবার) ম্যাচের পঞ্চমদিন যতক্ষণ ব্যাটিং করেছেন রিশাভ পান্ত, মনে হচ্ছিল হয়তো ৪০৯ রান তাড়ার অকল্পনীয় কাজটি করেই ফেলবে ভারত। তবে পান্ত আউট হওয়ার পর আবার খোলসবন্দী হয়ে যায় সফরকারীদের ব্যাটিং।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ভারত অলআউট হয় ২৪৪ রানে। ফলে স্বাগতিকরা পেয়ে যায় ৯৪ রানের লিড। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৩১২ রানে ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩২ ওভারে ৪০৯ রান।

এর বিপরীতে ১৩১ ওভার খেলে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান করে তারা। দিনের শেষ ওভারের আগেই ড্র মেনে নেয় দুই দল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট ড্র করার পথে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ১৯৯১ সালে এডিলেইডে ম্যচের শেষ ইনিংসে ৩৩৫ রান নিয়ে ড্র করেছিল ইংল্যান্ড।

এছাড়া ওভারের হিসেবে ভারতের ম্যাচ বাঁচানোর তালিকায় এটি চলে এসেছে চতুর্থ স্থানে। ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে দিল্লি টেস্টে ১৩১ ওভার ব্যাট করে ম্যাচ ড্র করেছিল তারা। চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৫০.৫ ওভার ব্যাটিং করে ম্যাচ ড্র করার রেকর্ড রয়েছে ভারতের। যা তারা করেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ১৯৭৯ সালের ওভাল টেস্টে।

রোববার ৩৪ ওভারে ২ উইকেটে ৯৮ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছিল ভারত। অপরাজিত ব্যাটসম্যান হিসেবে আজ আবার খেলতে নামেন অধিনায়ক রাহানে ও নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান পুজারা। আগের ম্যাচে ভারতের জয়ের নায়ক ছিলেন রাহানে। কিন্তু আজ হতে বসেছিলেন ভিলেন। কেননা দিনের দ্বিতীয় ওভারেই তিনি সাজঘরে ফিরে যান।

দিনের শুরুতেই উইকেট হারিয়ে ফেলায় হানুমা বিহারির আগে রিশাভ পান্তকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। একপ্রান্ত যখন আগলে রাখছিলেন পুজারা, তখন পাল্টা আক্রমণে ঝড় তোলেন পান্ত। দুজনের যুগলবন্দী ম্যাচে ফেরায় ভারতকে। এতে অবশ্য সরাসরি অবদান ছিল অসি অধিনায়ক টিম পেইনের। যিনি দুইবার ছাড়েন পান্তের ক্যাচ।

জোড়া জীবন পেয়ে পুজারার সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে দেড়শ রানের জুটি ও ব্যক্তিগত সেঞ্চুরির দিকে এগুচ্ছিলেন পান্ত। কিন্তু বিধিবাম। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় নতুন বল নেয়ার ঠিক আগের ওভারে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাথান লিয়নের শিকারে পরিণত হন এ তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দলীয় সংগ্রহ ঠিক ২৫০ রানে পৌঁছে দিয়ে পান্ত আউট হন ১২ চার ও ৩ ছয়ের মারে ১১৮ বলে ৯৭ রান করে।

অপরপ্রান্তে পুজারাও তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি। কিন্তু পান্তের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটে। ইনিংসের ৮৯তম ওভারে জশ হ্যাজলউডের বলে সোজা বোল্ড হয়ে যান তিনি। পুজারার ব্যাট থেকে আসে ২০৫ বলে ১২ চারের মারে ৭৭ রানের ইনিংস।

ভারতের সংগ্রহ ৮৮.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২৭২ রান। ম্যাচ বাঁচাতে শেষের ৫ উইকেটে খেলতে হতো আরও ৪৩.৪ ওভার। শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হানুমা বিহারি পায়ে চোট পেলে আরও কঠিন হয় তাদের কাজ। কিন্তু সেই চোট নিয়েই ব্যাটিং চালিয়ে যান বিহারি।সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যান অশ্বিনকে।

দুজন মিলে অবিশ্বাস্য জুটি গড়েন। যার সুবাদে আর কোনো উইকেটই হারাতে হয়নি ভারতকে। টেস্টের কঠিনতম শেষ সেশনটি বিনা বিপদেই পার করে দেন তারা। ইনিংসের ১৩১তম ওভার শেষে যখন ড্র মেনে নেন অসি অধিনায়ক, তখন বিহারি-অশ্বিন জুটির সংগ্রহ ২৫৯ বল বা ৪৩.১ ওভারে ৬২ রান।

মূলত এ জুটির সুবাদেই ম্যাচটি ড্র করতে সক্ষম হয়েছে ভারত। কেননা এদের যেকোনো একজন আউট হলেও তখন বাকি থাকতেন শুধুই বোলাররা। অবশ্য বিহারিকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেছিলেন মিচেল স্টার্ক। কিন্তু উইকেটের পেছনে আবারও ক্যাচ ছেড়ে দেন অধিনায়ক পেইন। ফলে ম্যাচ জিততে না পারার বেদনা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে।

শেষপর্যন্ত বিহারি ১৬১ বলে ২৩ ও অশ্বিন ১২৮ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন।