• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
ঐতিহাসিক ৭ মে: গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের সংগ্রামী জননেতা : প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে

দেখি বাংলার রূপঃ

দূর্গাসাগর-এক দীঘি অপরুপা

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০১৮  

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শহর খুলনায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা হলেও বরিশালে কখনো আসা হয়নি। কিছুটা পড়াশোনা, কিছুটা গল্পগুজব শুনে এ শহর সম্পর্কে ভাসা ভাসা যে ধারণা আমার ছিল তা মুগ্ধ হওয়ার মত নয়। বরং এক ধরণের ভীতিই কাজ করতো মনে। তাই যখন বছর দুয়েক আগে চাকরীর বদলী জনিত কারণে এখানে আসার সুযোগ মিললো রীতিমত মন খারাপ ছিল। চাকচিক্যময় চেনা রাজধানী শহর ছেড়ে সদূর বরিশাল কিভাবে থাকবো ! মন টিকবে'ত !

যথাসময়ে এলাম এবং বলতে দ্বিধা নেই এখন আমি রীতিমত এ শহরের প্রেমে পড়েছি। না ভুল হলো, শহর নয় বরিশালের প্রকৃতির প্রেমে পড়েছি। বরিশালের অনন্য সাধারণ প্রকৃতি – আহা, অপূর্বের থেকেও অপূর্ব । এখানের সবুজ-সতেজ ধানক্ষেত, বিরাট বিশাল প্রমত্তা সব নদ-নদী, মোটা সোটা প্রাচীন বৃক্ষরাজী, শহরময় ছড়োনো টলটলে পুকুর-দীঘি মুগ্ধতার মায়া কাজল পরিয়েছে আমার দু'চোখে। তবে আমার প্রতিদিনকার আটপৌরে জীবনের নানা কিছুর মধ্যে মন ছুঁয়ে যায় এমন একটি জায়গার কথাই আজকে বরং শেয়ার করি আপনাদের সঙ্গে। দূর্গাসাগর দীঘি। কি নামটি শুনেছেন নিশ্চয়ই !

বরিশালের অন্যতম সুন্দর একটি দর্শনীয় স্পট, বৃহৎ এ দীঘিটি শহর থেকে ১২ কিঃমিঃ দূরে বাবুগঞ্জের মাধবপাশা ইউনিয়নে বরিশাল ভায়া বানারীপাড়া/নেছারাবাদ রোডের পাশে অবস্থিত। দীঘিটির মোট আয়তন ৪৫.৪২ একর। এর মধ্যে জলভাগ ২৭.৩৮ একর এবং চারপাশে পাড় এলাকা ১৮.০৪ একর। জলভাগের পাড় ঘেষে ১.৬ কিঃমিঃ দীর্ঘ সুন্দর একটি ওয়াকিং ট্রাক। 

১৭৮০ খৃষ্টাব্দে তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের পঞ্চদশ রাজা শিবনারায়ণ প্রজাদের পানির কষ্ট নিরসনের জন্যে এ দীঘিটি খনন করেন। তিনি তাঁর প্রিয়তম রাণী শ্রীমতি দূর্গা দেবীর প্রতি ভালবাসার নিদর্শন স্বরুপ দীঘিটির নামকরণ করেন দূর্গাসাগর। তৎকালিন সময়ে সুবিশাল এ দীঘিটি জনকল্যাণে অপরিহার্য ভূমিকা রাখলেও পরবর্তীতে দীর্ঘ সময়ের অযত্ন-অবহেলায় এটি ভরাট হতে বসেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৪ সালে মাননীয় মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীঘিটি আবার পূণঃ খনিত হয়।

বর্তমানে দীঘিটি উচুঁ প্রাচীর পরিবেষ্টিত সংরক্ষিত এলাকা। সপ্তাহের সব দিনই এখানে যেতে পারেন। মাত্র ১০ টাকা মূল্যে মিলবে প্রবেশাধিকার (টিকেট)। শহর থেকে অটো বা মাহেন্দ নিয়ে যাওয়া যাবে সহজেই। আবার নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বানারীপাড়া/স্বরুপকাঠীর বাসে মাত্র ২০/২৫ টাকায় পৌঁছে যেতে পারবেন এখানে। 

দীঘির চারপাশে নানা প্রজাতির অসংখ্য গাছপালা। পাড় ঘেসে ওয়াকিং ট্রাক। ৩ দিকে ৩টি ঘাটলা। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে তৈরী হওয়া সুদৃশ্য সাদা টাইলস বসানো বৃহৎ পরিসরের ঘাটটি অত্যন্ত সুন্দর। দীঘির ঠিক মাঝখানে ছোট্র একট দ্বীপ। দ্বীপেও আছে কিছু গাছ-পালা। শেষ বিকেলে গাছের দীর্ঘ ছায়া পড়ে দীঘির টলটলে স্বচ্ছ পানিতে। আর মাথার উপরের অপূর্ব আকাশ তার অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্য নিয়ে যেন খেলা করে বেড়ায় পুরো দীঘিময়। মৃদু মৃন্দু বাতাসে দীঘির বুকে  হঠাৎ হঠাৎ কাঁপন তোলে ঢেউয়ের দীর্ঘ সারি। আর বছরের এ সময়টায় (শীত) সে ঢেউ আরো গতিময় হয়ে ওঠে অতিথী পাখির কলরোলে। বালিহাঁস, সরাইল সহ শত সহস্র অতিথী পাখির আনাগোনায় মুখর, প্রাণচঞ্চল এখন সেখানের পরিবেশ। এখন ঘুরতে গেলে তাই বোনাস হিসাবে দেখা মিলবে অতিথী পাখিদেরও। তাছাড়া ছোট্ট পরিসরে আছে কিছু সুদর্শন চিত্রল হরিণ। খাঁচার পাশে গিয়ে একেবারে কাছে থেকে দেখে আসতে পারবেন তাদের। ২/১টি পাতা বা কলা হাতে ডাক দিলে তারা একেবারে ছুটে এসে আপনার হাত থেকে খেয়ে যাবে।  

ও, আর একটা কথা বলা হয়নি। মাছ ধরতে ভালবাসেন যারা তাদের জন্যে এখানে আছে বড়শী ফেলে মাছ ধরার দারুণ সুযোগ। ৪০০০-৪৫০০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে প্রতি শুক্রবার ও শনিবার (৩৬ ঘন্টার জন্যে) মিলবে মাছ ধরার এ সুযোগ।

শহরের ব্যস্ত জণারণ্যে পরিশ্রান্ত মানুষ শীতের এই মনোরম আবহাওয়ায় বুক ভরে অক্সিজেন নিতে, মনকে সবুজ সতেজতায় ভরে তুলতে তাই ১টি বেলা স্বপরিবার বা সবান্ধব কাটিয়ে আসতে পারেন দূর্গাসাগর দীঘির মনোরম এ পরিবেশে।