• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

শরীয়তপুর বার্তা

গলা ছেড়ে বাংলা গান গাইলেন লুসি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

বরিশালে একুশের অনুষ্ঠানে শহীদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি পদক দেয়া হয়েছে মানবদরদী সিস্টার লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্টকে। পুরস্কার গ্রহণ শেষে গলা ছেড়ে বাংলায় গান গাইলেন তিনি। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের ৪ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে লুসিকে পদক দেয়া হয়। পরে সেখানে আলোচনা সভা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলায় গান গেয়ে শোনান ৯৪ বছরের লুসি হল্ট। এতে মুগ্ধ হয় বরিশাল বাসী।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে দেশ বরেণ্য সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত, বরিশালের সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শুভঙ্কর চক্রবর্তী সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু কুমার বিশ্বাস, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতি জন প্রফেসর মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ দুলাল, বর্তমান সভাপতি ফারুক হোসেন, সাংস্কৃতিক সংগঠক মিন্টু কুমার কর, সুশান্ত ঘোষ ও অপূর্ব অপুসহ গুণীজনরা উপস্থিত ছিলেন।

সিস্টার লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট জানান, শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক পাওয়াটা আমার কাছে আনন্দের। শেষ জীবনে আমি যা যা চেয়েছি সবকিছুই পেয়েছি। এখন আমার শেষ ইচ্ছা, মৃত্যু হলে আমাকে যেন বরিশালের মাটিতে সমাহিত করা হয়। আমি বরিশালকে ভালোবাসি, আজীবন বরিশালের মানুষের সঙ্গে মিশে থাকতে চাই।

জানা গেছে, ১৯৩০ সালে জন্ম নেয়া ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হল্টের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পাওয়ার দাবি ও তার জীবনী নিয়ে ২০১৬ সালে পহেলা ডিসেম্বর প্রথম ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন শুরু করেন সাংবাদিক অপূর্ব অপু। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লুসিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেন। এরপর ২০২৩ সালে ২৯ ডিসেম্বর লুসির সঙ্গে দেখা করতে আসেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। এ সময় লুসিকে নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করায় অপূর্ব অপুকে শুভেচ্ছা জানান শেখ রেহানা।

আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে লুসির অবদান অনেক। ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হ্যালেন্সে জন্ম নেন লুসি হল্ট। তার বাবা জন হল্ট ও মা ফ্রান্সিস হল্ট। ১৯৪৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন লুসি। ১৯৬০ সালে অক্সফোর্ড মিশনের একজন কর্মী হিসেবে বাংলাদেশে আসেন তিনি। নিয়োজিত হন মানবতার সেবায়। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় সহযাত্রীরা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও তিনি থেকে যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় আত্মগোপনে থেকে যশোর হাসপাতালে আহতদের সেবা দেন।
 
দেশে দেশে বাংলাদেশের স্বপক্ষে চিঠি লেখেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধাহতদের সেবা করেন। দেশ স্বাধীনের পরও তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি। মায়ার বন্ধনে থেকে যান। যুদ্ধ পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিও দেন লুসিকে। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন লুসি। লুসি শেষ জীবনে স্থায়ী হয়েছেন বরিশালের অক্সফোর্ড মিশনে। এসব কিছু বিবেচনা করে তাই তাকে এবার সম্মাননা দেয়া হয়েছে।

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শুভঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘লুসি বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু করেছে। তাকে শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক দেয়ায় আমরা খুশি। লুসি আমাদের সবারই গর্ব। বয়সের ভারে লুসি এখন অনেকটাই দুর্বল। লুসি ভালো থাকুক এখন এইটাই চাওয়া।’