• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৪  

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় মুসাফির নামের চার মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে তিন সদস্যর একটি কমিটি গঠনসহ চিকিৎসককে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।

মুসাফির শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরপালং এলাকার রাজিব শেখ ও রুবিনা আক্তার দম্পতির ছেলে।

ভুক্তভোগী পরিবার ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত দুই দিন ধরে পেটে গ্যাস ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে ভুগছিলো শরীয়তপুর পৌরসভার চরপালং এলাকার রাজিব শেখের ছেলে মুসাফির। বুধবার দুপুরে শিশুটিকে নিয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন মা রুবিনা বেগম। এসময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার শরীফ-উর রহমান। শিশুটিকে ভর্তি করা হলে তরল জাতীয় একটি ঔষধ লিখে দেন তিনি। এরপর ঔষধটি খাওয়ানোর পর আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু মুসাফির। শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে মা রুবিনা বেগম ও স্বজনরা বেশ কয়েকবার চিকিৎসককে ডেকে আনতে যান। তবে চিকিৎসক শরীফ-উর রহমান বিষয়টি আমলে না নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে আসেননি। এক পর্যায়ে কর্তব্যরত স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য বাধ্য হয়ে চিকিৎসকে ডাকতে গেলেও তিনি শিশুটির কোনো চিকিৎসা দিতে আসেননি। উপরন্তু শিশুটির অক্সিজেন মাস্ক খুলে তাঁর কাছে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর রাত ৮ টার দিকে মারা যায় শিশু মুসাফির। এছাড়া চিকিৎসক শরীফ-উর রহমানের বিরুদ্ধে রোগীদের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

মুসাফিরের মা রুবিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবু যখন অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে আমি নিচে অনেকবার দৌঁড়ে ডাক্তারকে ডাকতে যাই। তিনি আমাকে ধমক দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিয়ে বলে আমি আসতেছি। কিন্তু ডাক্তার আর আসেনি। আজ যদি আমার বাবুটাকে চিকিৎসা দেয়া হতো তাহলে বাবুটা বেঁচে থাকতো।

মুসাফিরের বাবা রাজিব শেখ বলেন, ডাক্তারের অবহেলায় আমার বাচ্চা মারা গেছে। তাকে অনেকবার অনুরোধ করেছি বাবুকে দেখে যেতে। তিনি আসেননি। ডাক্তারের জন্য সন্তানহারা হয়ে গেলাম। আমার বাচ্চার মতো আর কারো বাচ্চা যেন এভাবে চিকিৎসকের অবহেলায় মারা না যায় আমাদের এটাই দাবি।

হাসপাতালে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য বলেন, বাচ্চাকে প্রথমে আমি অক্সিজেন লাগিয়ে দিই। এরপর আমাকে বেশ কয়েকবার রোগীর লোক ডাকলে আমি বাচ্চাটাকে দেখে আসি। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ডাক্তারকে ডাকতে আমার ওয়ার্ড বয়কে দুইবার নিচে পাঠিয়েছি। যখন বাচ্চাটির খারাপ অবস্থা ছিল তখন ডাক্তার আসলে হয়তো বাচ্চাটা বেঁচে থাকতো।

চিকিৎসক শরীফ-উর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এমন অভিযোগ সত্য নয়। কেউ বাচ্চা নিয়ে জরুরী বিভাগে আসেনি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, শিশু মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সদর হাসপাতালের গাইনি কনসালটেন্ট হোসনে আরাকে প্রধান করে সিনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেটিক্স আতিকুর রহমান ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মিতু আক্তারকে সদস্য করা হয়েছে। তাদের আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি  চিকিৎসক শরীফ-উর রহমানকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। যদি তদন্তে  ওই চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যু বিষয়টি প্রমান হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শরীয়তপুর সিভিল সার্জন ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ পরান বলেন, শিশু মৃত্যুর বিষয়টি শুনে হাসপাতালে গিয়েছি। যদি চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুটির মৃত্যু হয়। তাহলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।