• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

শরীয়তপুর বার্তা

পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু ২৯ ফেব্রুয়ারি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

যান্ত্রিক ত্রুটি সমাধান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে শুরু হচ্ছে কুতুবদিয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো কুতুবদিয়া থেকে পাইপলাইনে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু হবে।

গভীর বঙ্গোপসাগরে বাস্তবায়িত ‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েস্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্পের আওতায় জ্বালানি তেল খালাসে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। শুরুতেই কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়লেও সবকিছু ঠিকঠাক করে গভীর সাগরে নোঙর করা দুটি জাহাজ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে খালাস করা ক্রুড অয়েল এবং ডিজেল পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে নিয়ে আসা হবে। উদ্বোধনের প্রায় চার মাস পর এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

সূত্র জানায়, গভীর সাগরে নোঙর করা মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ না করে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল খালাসের জন্য সরকার পাঁচ হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে ‘ ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার অদূরে গভীর সমুদ্রে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ নির্মাণ করা হয়। ওখান থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত অব শোর এবং অনশোর মিলে মোট ২২০ কিলোমিটার ডাবল পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। এরমধ্যে ১৪৬ কিলোমিটার অফশোর পাইপলাইন এবং ৭৪ কিলোমিটার অনশোর পাইপলাইন রয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইন ছাড়াও মহেশখালীতে ১ লাখ ২৫ হাজার টন ক্রুড অয়েল ৮৩ হাজার টন ডিজেল সংরক্ষণের ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হয়। বিদেশ থেকে আমদানি করা ক্রুড অয়েল ও ডিজেল ঐ দুটি ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করে সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী দুটি পাইপলাইনের একটি দিয়ে ক্রুড অয়েল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পাইপলাইন দিয়ে ডিজেল পদ্মা অয়েল কোম্পানি, যমুনা অয়েল কোম্পানি এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পতেঙ্গা গুপ্তখালের প্রধান ডিপোতে পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

জার্মানির একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চায়না পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এই প্রকল্পের কাজ করে।

এর আগে, গত বছরের জুলাই মাসে গভীর সাগর থেকে জ্বালানি তেল খালাসের উদ্যোগ নেয়া হয়; কিন্তু ক্রুড অয়েল খালাস শুরু হলে পাইপলাইনসহ প্রকল্পে বেশ কিছু ত্রুটি দেখা দিলে তা আর সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে ত্রুটি সরিয়ে গত ১ ডিসেম্বর সৌদি আরব থেকে আমদানিকৃত ৮২ হাজার টন ক্রুড অয়েলবাহী জাহাজকে বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত ভাসমান জেটিতে (এসপিএম বয়া) বার্থিং দেওয়া হয়। জাহাজটি ক্রুড অয়েল খালাস করে চলে যাওয়ার এক দিন পরেই অন্য একটি জাহাজ ৬০ হাজার টন ডিজেল খালাস করে। ক্রুড অয়েল ও ডিজেলগুলো সেখানেই মজুত ছিল। পাইপলাইনের সামান্য জটিলতায় ওগুলো ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়নি।

এরই মধ্যে সব ত্রুটি সারিয়ে ফেলা হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও। অবশেষে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি কুতুবদিয়ার ট্যাঙ্ক থেকে পাইপলাইনে ক্রুড অয়েল আসা শুরু হবে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। ইস্টার্ন রিফাইনারি এসব ক্রুড অয়েল পরিশোধনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে সংশ্লিষ্ট বিপণন কোম্পানিগুলোকে প্রদান করবে। ডিজেলগুলো সরাসরি তিনটি তেল বিপণন কোম্পানিকে প্রদান করা হবে।

বিপিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অবিশ্বাস্য রকমের কম সময়ে কুতুবদিয়া থেকে পতেঙ্গায় জ্বালানি তেল পৌঁছে যাবে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। বছরে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনে সেকেলে ধারণা পাল্টে বিশ্বমানে উন্নীত হবে। বছরের পর বছর বহির্নোঙরে নোঙর করা মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ করে তেল পরিবহন করা হতো। এখন সেই খরচটি পুরোপুরি বেঁচে যাবে। অন্যদিকে একটি জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে আগে ১৫ দিন সময় লাগত, তা এখন ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় নেমে আসবে।

ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর এই প্রথম পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবাহিত হবে। এটি দেশের জ্বালানি খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।