• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

লেখাপড়ার নামে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করার আহ্বান

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৪  

শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভিভাবক ও শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, লেখাপড়া খুবই দরকার। কিন্তু এই লেখাপড়ার নামে তাদের ওপর কোনও চাপ সৃষ্টি করবেন না। আমরা এখন চাচ্ছি খেলাধুলা এবং নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই তারা তাদের লেখাপড়া শিখবে, যাতে তার ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা ও মেধা বিকাশের সুযোগ হয়।

শিশুকাল থেকেই সততা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা, জাতীয় দিবসগুলো সম্পর্কে শিক্ষাদান এবং রাস্তায় চলার নিয়ম-কানুন তথা ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার জন্যও অভিভাবক-শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আজ রবিবার (১৭ মার্চ) সকালে জাতির পিতার সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী এবং ‘জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

রকারপ্রধান বলেন, আজকের শিশুদের কাছে এটাই আমার অনুরোধ, গুরুজনদের মানতে হবে। শিক্ষককে মানতে হবে। বাবা-মায়ের কথা শুনে চলতে হবে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তাহলে কেউ বিপথে যাবে না।

তিনি শিক্ষক-অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির থেকে দূরে থাকার জন্য ছোটবেলা থেকেই সততার শিক্ষা দিতে হবে। সেই সঙ্গে গান-বাজনা ও লেখাপড়া, ছবি আঁকা থেকে শুরু করে ধর্মীয় শিক্ষাসহ সব ধরনের কারিকুলামের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

17-03-24-PM_Bangabandhu Birth Anniversary-5

সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ এবং মেধা ও মননের উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যেই তার সরকার কারিকুলাম তৈরি করে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিভাবক ও শিক্ষক আপনাদের কাছেও আমার এই অনুরোধ থাকবে, ছোটবেলা থেকেই তাদের ভেতরে যেন মানবিক গুণগুলো গড়ে উঠতে পারে। সেদিকে যেমন দেখবেন, তেমনি এই শিশুদের ভেতরে যে সুপ্ত প্রতিভা ও মেধা রয়েছে সেই সুপ্ত প্রতিভা ও মেধা ও মনন বিকাশের সুযোগ যেন তারা পেতে পারে সেদিকেও লক্ষ রাখবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন তো শিশুরা বিশ্বকে চোখের সামনে দেখতে পায়। কাজেই ক্লাসে শুধু বই পড়া নয়, চোখে দেখেও যেন তারা শিখতে পারে। আর আজকের শিশুরাই হবে আগামী দিনের ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক’। আর সেটাই আমাদের সরকারের কাম্য। আমি চাই আমাদের দেশের প্রতিটি শিশু যাতে সুন্দর, নিরাপদ এবং উন্নত জীবন পায়, সেটাই আমার সরকারের কাম্য।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রীমি) বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক স্বাগত বক্তৃতা করেন। শিশু বক্তা তায়্যেবা তাসনীমও স্বাগত বক্তৃতা করে। অপর শিশু পিয়াসা জামিল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে। আব্দুর রহমান এবং লামিয়াতুল বারী শিশুদের এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও শিশু অধিকার শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

17-03-24-PM_Bangabandhu Birth Anniversary-7

জাতির পিতার ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার ১০৪ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে মোট ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থী পেয়েছেন ৫ হাজার টাকা করে। নির্বাচিত দুই শিক্ষার্থী টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মুশফিকা জান্নাতী ও কোটালীপাড়া উপজেলার আরাফাত শেখ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে জাতির পিতার জবানিতে তাঁর বাবার (শেখ লুৎফর রহমান) উপদেশ উদ্ধৃতি করে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের সততায় ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সেখানে আমার দাদা কিন্তু একটা কথাই বলেছেন- যাই কিছু করো পড়াশোনা করতে হবে। লেখাপড়া শিখতে হবে। লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে, এটাই তাঁর উপদেশ ছিল। অর্থাৎ ‘সিনসিয়ারিটি অব পারপাস অ্যান্ড অনেস্টি অব পারপাস’ এই দুটো যদি থাকে জীবনে কখনও ব্যর্থ হবে না। সবসময় সফলতা আসবে। সততা ও আন্তরিকতা থাকলে যেকোনও কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব।

17-03-24-PM_Bangabandhu Birth Anniversary-10

প্রধানমন্ত্রী যুক্ত করেন, আইন এবং রাস্তায় চলাচল সম্পর্কে সম্যক শিক্ষা দেওয়া একান্তভাবে দরকার। পাশাপাশি শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার শিক্ষা দিতে হবে। অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গে কেউ যেন দুর্ব্যবহার না করে, বরং সহানুভূতিশীল দৃষ্টি দিয়ে দেখে, তাদের যেন আপন করে নেয়, সেজন্য ছোটবেলা থেকে শিক্ষা দিতে হবে। যেকোনও অপচয় রোধ করা তাদের শিক্ষা দিতে হবে। তাহলেই তাদের মানুষের মতো মানুষ এবং মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।

তিনি এ সময় জাতীয় দিবসগুলো সম্পর্কে শিক্ষা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট অভিভাবক শিক্ষকসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। তাহলে আমাদের শিশু-কিশোর বা ছাত্ররা এই বিষয়গুলো জানবে না কেন? প্রশ্ন করা হলে তারা এড়িয়ে যাবে কেন? কাজেই এই শিক্ষাগুলো তাদের যথাযথভাবে দিতে হবে। বিজয়ী জাতি আমরা। আমরা কী করে ভুলে যাবো যে যুদ্ধ করে আমরা এই দেশকে স্বাধীন করেছি। সূত্র: বাসস।