• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

দমনের চেয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধেই মঙ্গল দেখছে দুদক

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৩  

দমনের চেয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধেই মঙ্গল দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যে কারণে অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি তারা এনফোর্সমেন্ট অভিযানকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিগত বছরে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে ৪৫৬টি অভিযান পরিচালনা করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। সব মিলিয়ে এক বছরে ২ হাজার ৫৫০টি এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ করে এই ইউনিট। এসব অভিযান শেষে জরিমানা, কারাদণ্ড, ঘুষের টাকা উদ্ধারসহ নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানায়, জনস্বার্থ বিবেচনায় ২০১৯ সালে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে এনফোর্সমেন্ট ইউনিট গঠন করা হয়। চালু করা হয় হটলাইন ১০৬ নম্বর। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হটলাইনে প্রতিদিনই কল আসে বিভিন্ন অভিযোগের। এরমধ্যে বেশিরভাগই দুদকের তফসিলবহির্ভূত। ২০২২ সালে দুদকে কল আসে ৩৯ হাজার ৪৮৮টি। এরমধ্যে দাফতরিকভাবে রেকর্ড করা হয় মাত্র ১ হাজার ৭৬২টি। এছাড়া অভিযোগ সেল থেকে দৈনিক ও সাম্প্রতিক কল থেকে নেওয়া হয় ১৪৮টি অভিযোগ। ই-মেইল ও সোশাল মিডিয়া সোর্স থেকে ৭৭টি এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া থেকে ৫৬৩টি অভিযোগসহ ২ হাজার ৫৫০ অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ইউনিট থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে শাস্তিমূলক বদলি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় ১০ জনের বিরুদ্ধে। কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৩ জনকে। বরখাস্ত করা হয় ৭ জনকে। কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয় ৩ জনকে। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার, ইটভাটা পরিচালনা, বালু উত্তোলন, সরকারি জমি দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে জরিমানা আদায় করা হয় ৫ লাখ ১৩ হাজার ৯০০ টাকা। সরকারি অর্থ আত্মসাতের মধ্যে আদায় করা হয় এক কোটি ১২ লাখ ৪১ হাজার ৪৮৭ টাকা। ঘুসের অর্থ উদ্ধার করা হয় ৯৬ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা প্রদানে দুর্নীতি উদঘাটন করা হয় ৫ লাখ ২ হাজার ৫৯২ টাকার, কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের দুর্নীতি উদঘাটন করা হয় ৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকার। স্থানীয় সরকার ও নাগরিক সেবা, ভূমি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন, বন ও পরিবেশ, প্রকৌশল, কৃষি ও অর্থসহ বিভিন্ন সেক্টরে অভিযান চালায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট।

জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড তথা তাৎক্ষণিক দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট টিম কার্যক্রম পরিচালনা করে। যারা এই অভিযান চালান তারা পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুদকের উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) বরাবর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। টিমের প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, এনফোর্সমেন্ট ইউনিট কমিশনের অনুমোদন নিয়ে মামলা দায়েরের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে চিটি দেয়।

দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের তাৎক্ষণিক এসব অভিযানের মাধ্যমে অনেক দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিতর্কিত নিয়োগ বন্ধ করা, নিম্নমানের নির্মাণকাজ বন্ধ করা, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, নদী-খাল ও সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিযান পরিচালনার সময় বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সহায়তা নেওয়া হয়।’ ফলে অভিযানের মান এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

অভিযোগ দায়ের ও কার্যক্রম নিয়ে দুদক তার কাজে সন্তুষ্ট হলেও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) দুদক নিয়ে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, দুদকের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার অভিযোগ বিদ্যমান। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগকারীরা নিজেদের পরিচয় প্রকাশে আগ্রহী নয়, যা দুদকের প্রতি তাদের আস্থাহীনতা প্রকাশ করে। এছাড়া অভিযোগ দায়েরের হারের তুলনায় মামলা দায়েরের হার কম। নারী ও দরিদ্রসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিশেষ চাহিদা মেটানোর কোনও কাঠামো নেই। সার্বিকভাবে দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ জনগণের ধারণা খুব আশাব্যঞ্জক নয়।’