• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিমানার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৩  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তাদের দাবি আদায়ে ধর্মঘট ঘোষণা করলে মুজিব সমর্থন জানান। কর্মচারীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ২৯ মার্চ কর্তৃপক্ষ তাকে জরিমানা করে। এ নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৯ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ২য় বর্ষের ছাত্র তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন বেতনভোগী ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ চলছিল। দাবি-দাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে পেশাগত আন্দোলন শুরু হয়। সে-সময় কর্মচারীদের বেতন ছিল ১১ থেকে ১৪ টাকা। চাকরির শুরুতে কর্মচারীদের অধিকাংশই কোন নিয়োগপত্র পেত না। চাকরিতে স্থায়ী হতে তাদের নানা ভোগান্তি তো ছিলই, ছিল অকারণে চাকরিচ্যুতির হুমকি। কর্মচারীদের জন্য থাকার কোনো স্থায়ী/অস্থায়ী বাসস্থান কিংবা আবাসিক ব্যবস্থা ছিল না।

কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন দেন- দরবার চালিয়ে আসা সত্ত্বেও তাদের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায়, ন্যায্যতা আদায়ের জন্য ১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ থেকে থেকে কর্মচারীরা ধর্মঘটে চলে যান। বঞ্চনা আর ক্ষোভ থেকে সে বছর ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা আন্দোলন গড়ে তোলেন। কর্মচারীদের ধর্মঘটের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজও সহায়ক শক্তি হিসেবে এগিয়ে আসে।

৩ মার্চ সংগ্রামী ছাত্র সমাজ ক্লাস বর্জন করে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বানে ৫ মার্চ পূর্ণ ছাত্র ধর্মঘটের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অপরাহ্নে অনুষ্ঠিত হয় একটি ছাত্রসভা। এই সভায় ছাত্ররা স্থির করে যে কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া যতক্ষণ না আদায় হবে, কর্তৃপক্ষ যতদিন না স্বীকার করবেন তাদের দুর্দশার প্রতিকার, ততদিন পর্যন্ত তারা সহানুভূতি সূচক ধর্মঘট অব্যাহত রাখবে। ধর্মঘটের প্রস্তুতি পর্যায়ে বিশ্বদ্যিালয়ের মুসলিম ছাত্রলীগ ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে কর্মচারীরা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। এই আন্দোলনের কর্মসূচির প্রতি ছাত্রদের সমর্থনে এবং সহযোগিতা কর্মচারীদের মধ্যে সাহস জোগায়, আত্মবিশ্বাস প্রদান করে, হতাশা থেকে আত্মপ্রত্যয় ফিরে আসে।

শেখ মুজিব ছাত্র নেতা এবং একজন যুবকর্মী হিসেবে এই আন্দোলনকে শুধু সমর্থনই করেননি, এক সময় তিনি এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়ে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সে সময় অন্যান্যের মধ্যে নাঈম উদ্দিন আহমেদ, মোল্লা জালাল উদ্দিন, আবদুস সামাদ, আবদুর রহমান চৌধুরী, কল্যাণ দাশগুপ্ত, নাদেরা বেগম, অলি আহাদ, দবিরুল ইসলাম প্রমুখ ছাত্রনেতাও এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ছাত্র নেতাদের নেতৃত্বে ও পরিচালনায় কর্মচারীদের আন্দোলন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান সরকার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সরকারের নির্দেশানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই আন্দোলন মোকাবিলা করতে গিয়ে নেতিবাচক পন্থায় দমন করার উদ্দেশ্যে ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। শুধু তাই নয় আন্দোলন অনুসারী ও নেতৃত্বে যুক্ত ২৭ জন ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এদের মধ্যে ৬ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছরের জন্য এবং ১৫ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। একজনকে ১০ টাকা জরিমানা করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৫ জনকে ১৫/- টাকা করে জরিমানা করা হয় এবং মুচলেকা প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৯৪৯ সালের ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক হরতাল ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হয়। শাস্তিপ্রাপ্ত অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শর্ত মেনে জরিমানা পরিশোধ করে ছাত্রত্ব বজায় রাখেন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শর্ত মেনে ১৫ টাকা জরিমানা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হিসেবে ফিরে আসার প্রস্তাব শেখ মুজিব প্রত্যাখান করেন।

শেখ মুজিব প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন এই বলে যে, তিনি ফিরে আসবেন দেশকর্মী হিসেবে- ছাত্র হিসেবে নয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার-তিরস্কারের পর তিনি কারান্তরালে চলে গেলেও মানুষের অন্তরে স্থান করে নেন। দু/আড়াই বছর পর ফিরে আসেন ভাষা আন্দোলনে জাতিগত চেতনার স্ফূরণ ছড়িয়ে দিতে। এসেছিলেন জাতীয় নেতৃত্বের এক আলোকরশ্মি ছড়িয়ে দিতে। শেখ মুজিবের জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে এবং বাঙালির জাতির পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পেছনে প্রধানত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের আন্দোলন আর ভাষা আন্দোলনের দিক নির্দেশনামূলক ভূমিকা ছিলো এক মাইলফলক।