• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী

শহরের চোখ খুলে দিয়েছে যে সড়ক

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২৩  

রাজধানীর একটি স্কুলে চাকরি করতেন সোনিয়া। তাঁর স্বামী বেসরকারি একটি চাকরি করতেন। করোনার সময় যখন চাকরি চলে যায়, তখন রাজশাহীতে নির্মাণ করা হচ্ছিল বিমান মোড়ের সড়কটি। ওই সড়ক ঘিরে স্বপ্ন দেখেন সোনিয়া। স্কুলের চাকরি ছেড়ে স্বামীকে নিয়ে চলে আসেন রাজশাহীতে। স্বামী-স্ত্রী মিলে সড়কের পাশে ‘হেঁশেল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এখন সেই হেঁশেলে ঢুকতে হলে সিরিয়াল দিতে হয়। সড়কটিই যেন তাঁদের শহরের চোখ খুলে দিয়েছে।

রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের ‘আলিফ লাম মীম’ ভাটার মোড় থেকে ছোট বনগ্রাম, মেহেরচণ্ডী, বুধপাড়া, চৌদ্দপাই হয়ে সড়কটি রাজশাহী-নাটোর সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। শুধু সোনিয়া দম্পতি নয়, দৃষ্টিনন্দন ওই সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সড়কটি কেন্দ্র করে রাজশাহী শহর ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।

এলাকার মানুষ কোনো দিন স্বপ্নেও দেখেনি, সড়কটির কারণে তাঁদের ৩০ হাজার টাকা কাঠার জমি ২০ লাখ টাকা হয়ে যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে মুখে সড়কটির নাম হয়ে গেছে ‘বিমান মোড়-বিহাস’ সড়ক। কারণ, সড়কের প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে পুরোনো একটি যুদ্ধবিমান। সেখান থেকেই সড়কটি চলে গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা ‘বিহাস’ পর্যন্ত।

সড়কটির ফুটপাত ও আইল্যান্ডে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। প্রথম এক কিলোমিটারে সোনালু, দ্বিতীয় এক কিলোমিটারে জারুল, তৃতীয় এক কিলোমিটারে কৃষ্ণচূড়া, চতুর্থ এক কিলোমিটারে পলাশ এবং শেষের দুই কিলোমিটারে কাঞ্চন গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। আইল্যান্ডে বেড়ে উঠছে পাম, রঙ্গন, কাঠগোলাপ, চেরি, মাধবীলতা, মসুন্ডা ও করবী।

ভালো রাস্তাঘাট না থাকলে মানুষ সেদিকে যেতে চান না। এ জন্য মূল শহরের চারদিকে রাস্তাঘাট সম্প্রসারিত করছেন, যাতে শহরটি আধুনিক ও বাসযোগ্য হয়।

সড়কটিতে ২৮৫টি ডেকোরেটিভ পোলে বসানো হয়েছে ৫৩০টি অত্যাধুনিক এলইডি বাল্ব। ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অত্যাধুনিক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতিগুলো অটোলজিক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে ও নেভে। ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ৪ লেনের সড়কটি উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, রাজশাহী যেন ঘিঞ্জি শহরে পরিণত না হয়, সে জন্যই তিনি উত্তর দিকে শহরটি ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ভালো রাস্তাঘাট না থাকলে মানুষ সেদিকে যেতে চান না। তাই মূল শহরের চারদিকে রাস্তাঘাট সম্প্রসারিত করছেন, যাতে শহরটি আধুনিক ও বাসযোগ্য হয়।


১৮৯ কোটি ৩৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি যেন শহরের চোখ খুলে দিয়েছে। সড়কের দুই পাশে অনাবাদি পতিত জমি এখন হয়ে উঠেছে সোনার টুকরা। সিরাজগঞ্জের টাইলস শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম ঢাকায় কাজ করতেন। রাজশাহীর ‘বিমান মোড়-বিহাস সড়ক’ দেখে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। নতুন সড়কের মুশরইল এলাকায় কিছু জমি ইজারা নিয়ে নিজেই একটি কারখানা খুলেছেন।

আশরাফুল বলেন, ল্যান্ডিং টাইলস রাজশাহীর লোকজন বাইরে থেকে আমদানি করতেন। শহরতলির ওই জায়গার ইজারা মূল্য কম ছিল। এ জন্য তাঁর মতো একজন শ্রমিক কারখানা খুলতে পেরেছেন।

সরেজমিন দেখা গেল, সড়কের বাঁ পাশে আগের পতিত জায়গায় চার-পাঁচটি আবাসিক এলাকার সাইনবোর্ড। ছয় কিলোমিটার সড়কে মাঝে মাঝে গড়ে উঠেছে কয়েকটি মোড় বা চত্বর। সেই মোড়কে কেন্দ্র করে রীতিমতো বাজার গড়ে উঠেছে।

সড়কের দুই পাশে আবাসিক এলাকা করার ধুম পড়েছে। সড়কটির কারণে নিরিবিলি গ্রামীণ জনপদ রাতারাতি শহর হয়ে উঠছে। আশরাফুলের কারখানার পাশে যৌথভাবে বাড়ি করতে ১০ হাজার টাকা কাঠা হিসাবে একখণ্ড জমি কিনেছিলেন রাজশাহীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১২ কর্মকর্তা। তাঁরা এখন সেই জমিতে বাড়ি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তাঁদেরই অংশীদার আসাদ সরকার বলেন, একসময় ধারণা ছিল, বাড়ি করতে হলে শহরের আশপাশে করতে হবে। কিন্তু সড়কটি মানুষের সেই ভুল ভেঙে দিয়েছে। সড়কটি হওয়ার আগে জায়গাটি প্রায় পতিত ছিল। ১০ হাজার টাকা কাঠার জমি এখন ২২ লাখ টাকা কাঠা হয়ে গেছে।

নগরের মেহেরচন্ডী এলাকার বাসিন্দা শাহীন আলম বলেন, এলাকার মানুষ কোনো দিন স্বপ্নেও দেখেনি যে তাঁদের এই উন্নতি হবে। তাঁদের ৩০ হাজার টাকা কাঠার জমি এখন ২০ লাখ টাকা কাঠা হয়ে গেছে।