• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

ভেদরগঞ্জে জলাবদ্ধতা নিরসনে ফলেছে কোটি টাকার ফসল

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৩  

ভেদরগঞ্জ উপজেলায় চলতি বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনের ফলে আবাদি জমি বৃদ্ধি পেয়েছে ৮১০ একর। আর ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২১.২ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।

 ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, উপজেলা পরিষদের অর্থ, প্রশাসনের সহায়তা আর কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ১১টি প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে এ জমি ও ফসল বৃদ্ধি পেয়েছে।

 প্রকল্প গুলো হচ্ছে মহিষার ইউনিয়নে সাজনপুর ও মির্জাপুরে জমি ১০০ একর, ছয়গাঁও ইউনিয়নে মনুয়ায় ৪০ একর, নারায়নপুরে ২৫ একর,ডিএম খালির পাইয়াতলীতে ১০০ একর, চরকুমারিয়ার খাস গাজিপুরে ০৫ একর, আর্শিনগর ইউনিয়নে চরফিলিজে ৫০ একর, চরভাগা ইউনিয়নের ঢালী কান্দিতে  ৩০০ একর,চরসেন্সাস ইউনিয়নের বালা কান্দিতে ৩৫ একর ও বালার চরে ২০ একর , দক্ষিণ তারাবুনিয়ার কিরণ নগরে ৪৫ একর ও সখিপুর ইউনিয়নে  মালত কান্দিতে ৭৫ একর জমির জলাবদ্ধতা নিরোসনে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এর ফলে চলতি বছরেই ২০৫.০৬ এক জমি আবাদের আওতায় এসেছে। যার মধ্যে  পাট ও আউশ ধান আবাদ হয়েছে ১৪৬.১১ একর জমিতে আর আমন ধান আবাদ হয়েছে ৫৮.৯৪ একর জমিতে। আসন্ন রবি মৌসুমে জলাবধ্যতা মুক্ত সম্পুর্ন জমিই আবাদের আওতায় আসবে।

সখিপুর ইউনিয়নের মালৎ কান্দি গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বেপারী বলেন,আমাদের গ্রামে পানি আটকে থাকায়  প্রায় ৫০ একর জমি পরিত্যাক্ত ছিলো। কৃষি বিভাগ পাইপ দিয়ে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করায় এ বছর ৪৫ একর জমিতে আউশ ধান ও পাট আবাদ হয়েছে।

উপজেলার মহিষার ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের কৃষক সোহেল ছৈয়াল জানান, মাছে প্রজেক্ট করে ১০/১২ বছর ধরে আমাদের প্রায় ১০০ একর জমি  পানি নিচে ডুবে ছিলো। এ বছর আমাদের চেয়ারম্যান অরুন হাওলাদার এর মাধ্যমে ইউএনও স্যার খাল কেটে দেয়ার আমরা সেই জমি আবাদ করেঠি ধান পাট হইছে এবার ধূলটি ফসল ও ফলাবো।

উপজেলার আর্শিনগর ইউনিয়নের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা কায়সার আহম্মেদ রানা বলেন, আমাদের উপজেলায় ২টি খাল খনন ও ৭টি এলাকায় ড্রেন ও পাইপ লাইন স্থাপন করে জলাবদ্ধতা থেকে ১০ ইউনিয়নের ১১ এলাকার ৮১০ এক জমি মুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে গত আউশ ও পাট মৌসুমে  আবাদ হয়েছে ১৪৬.১১ হেক্টর জমি। আমন আবাদে এসেছে আরো ৫৮.৯৪ হেক্টর জমি। আর বাকী ৬০৪.৯৫ একর জমি আসন্ন রবি মৌসুমে আবাদের আওতায় চলে আসবে।

 ভেদরগঞ্জ উপজেলা উপসহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা আবু হানিফ জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীরা চরভাগা ,সখিপুর মহিষারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে অবৈধভাবে ১১টি স্থানে ভরাট, বাঁধ নির্মাণ, কালভার্টের মুখ বন্ধ ও খাল দখল করে রাখে।
এতে খালের স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। পানি নিষ্কাশন বন্ধ থাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জলাবদ্ধতার কারণে ১০/১২ বছর ধরে ওই এলাকার ৮১০ একর ফসলি জমির চাষাবাদ বন্ধ হয়ে অনাবাদি হয়ে যায়।কৃষি বান্ধব প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার কন্যা গত করোনা কালিন সময়ে সংকট মোকাবেলায় কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেন। তার নির্দেশ একইঞ্চি জমিও  খালি রাখা যাবেনা বাস্তবায়নে আমাদের স্যার কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলাম উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উপজেলার জলাবদ্ধতার সমস্যটি তুলে ধরেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্যার ও ইউএনও স্যারের দেয়া আর্থিক সহায়তা ও দিকনির্দেশনায় আমরা কৃষি বিভাগ কাজ করে ৮১০ একর জমির জলাবদ্ধতা নিরোশন করি।

 ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফাতেমা ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনার  নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। এই উপজেলার প্রায় ১০০০ হেক্টর জমি বর্ষার পানি আটকে যাওয়ার কারনে মৌসুমি পতিতে পরিনত হয়। সেই জমিগুলোর জলাবদ্ধতা নিরসন করে আবাদের আওতায় আনার লক্ষ্যে গত বছর নভেম্বর মাসের মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি উপস্থাপন করলে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির মোল্লা মহোদয়, আমাদেরকে ১০ লক্ষ টাকা সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তীতে ফ্রেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন মহোদয়ের আন্তরিক সহযোগিতা এবং উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা  আবু হানিফ এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কায়সার আহমেদ এর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ৮১০ একর জমির জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়। সেই জমিগুলো এখন ধীরে ধীরে আবাদের আওতায় আসছে। সামনের সময়ে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে উপজেলা পরিষদ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা আরো কাজ করতে চাই।
 ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,আমাদের উপজেলায় কর্তৃপয় ব্যাক্তি খাল দখল, মাছের ঘের তৈরী, কেউ আবার মাটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণসহ বিভিন্ন উপায় জমি থেকে পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করে রেখে ছিলো। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আহবানে সারা দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদ্বয়ে সহায়তায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৮১০ এর জমির জলাবদ্ধতা নিরোশন করি। তাতে প্রায় কোটি টাকার ফসল অধিক উৎপাদন হয়েছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সারা দিয়ে  প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদ করতে গিয়ে দেখি আমার উপজেলা ১০ ইউনিয়নে প্রায় হাজারে অধিক একর জমি পানিতে ডুবে থাকায় ১০/১২ বছর অনাবাদি পরে আছে। আমি ইউএনও সাহেব ও কৃষি অফিসারের সাথে মত বিনিময় করে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ্য প্রদান করি। সেই বরাদ্দ্যে কৃষি বিভিাগ ১০ ইউনিয়নে ১১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এতে ৮১০ একর জমি জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়েছে। আউশ, পাট ও আমন মিলে ৩২১.২ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদ হয়েছে । যার বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।