• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

ইতিকাফের গুরুত্ব ও অনন্য ফজিলত

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২৪  

ইতিকাফ আরবি শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে– অবস্থান করা, নিঃসঙ্গতা, বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি। পরিভাষায় নির্দিষ্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইবাদত বন্দেগি (নামাজ, রোজা, জিকির এস্তেগফার দুআ কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন) করার উদ্দেশ্যে জামে মসজিদে অবস্থান করা।

ইতিকাফ পূর্ণ রমজান মাস জুড়েও হতে পারে। যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আবার রমজান ছাড়াও অন্য যে কোনো সময় সর্বনিম্ন দশ-পনের মিনিটের জন্যও নফল ইতিকাফ হতে পারে। আর এই রমজান মাসের মধ্যেই রয়েছে মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুলকদর। যে রাতের ইবাদতের বিনিময়ে বান্দার জন্য রয়েছে হাজার বছর ইবাদত অপেক্ষা উত্তম প্রতিদান।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই সুন্নত ইতিকাফ আদায়ে রমজানের শেষ দশকে যাদের হাতে সময় আছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য মসজিদে ইতিকাফ করা উচিত। নিজের গুনাহ মাফের জন্য এবং লাইলাতুলকদরের ফজিলত অর্জনের জন্য ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সুবর্ণ সুযোগ। যা প্রতি বছর একবারই আসে আমাদের মাঝে। ইতিকাফের কিছু প্রকার রয়েছে। নিন্মে এগুলো নিয়ে আলোকপাত করবো।

সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ
রমজানের শেষ দশকে জামে মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কোনো এলাকা বা পাড়া-মহল্লার কোনো একজন ব্যক্তিও যদি জামে মসজিদে ইতিকাফ করেন, তবে পুরো এলাকাবাসীর জন্য তা যথেষ্ট হবে। অন্যথা, বাকিরা সকলেই গুনাহগার হবেন।

ওয়াজিব ইতিকাফ

কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করল, যদি আমার এই উদ্দেশ্য পূরণ হয়। তবে আমি আমি পাঁচদিন ইতিকাফ করব। উদ্দেশ্য পূরণ হলে, এ অবস্থায় ইতিকাফ করা ওয়াজিব।

মুস্তাহাব ইতিকাফ

দশ মিনিট বা এক ঘণ্টার জন্য ইতিকাফের নিয়ত করে মসজিদে অবস্থান করা। যা দিনে রাতে যে কোনো সময় হতে পারে। তবে পবিত্র অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করে ইবাদতে মশগুল থাকা চাই। প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ, অজু, গোছল করা ব্যতীত ইবাদত বহির্ভূত কোনো দুনিয়াবি কাজে সময় নষ্ট না করা উচিত। ইবাদতের মাধ্যমে সময়কে কাজে লাগানোই মূল উদ্দেশ্য।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে  উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি ২০২৫) এজন্য আমাদেরও উচিত হলো, আমরা রমজানের শেষ দশকে জামে মসজিদে ইতিকাফ করব।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত
আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের মধ্য দশকে ইতিকাফ করতেন। এক বছর ইতিকাফ করেন। যখন একুশতম রাত এলো, যে রাত শেষে সকালবেলা তিনি তার ইতিকাফ থেকে বের হবেন। তখন তিনি বললেন, যারা আমার সঙ্গে ইতিকাফ করেছে। তারা যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে। আমাকে স্বপ্নে লাইলাতুল কদর (কদরের রাতটি) দেখানো হয়েছিল। পরে আমাকে তা (সঠিক তারিখটি) ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য আমি স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি যে, ঐ রাতের সকালে আমি কাদা-পানির মধ্যে সিজদা করছি। তোমরা তা শেষ দশকে তালাশ করো এবং প্রত্যেক বিজোড় রাতে তালাশ করো। (সহিহ বুখারি ২০২৭)

এখান থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা হলো, আমরা রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করব এবং প্রত্যেক বিজোড় রাতে লাইলাতুলকদর তালাশ করব।  আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইতিকাফের গুরুত্ব অনুধাবন করে আমল করার তাওফিক দান করুন। লাইলাতুল কদরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি রাতে ইবাদত করে হাজার বছরের ইবাদতের পুণ্য লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।