• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

দেশের পর্যটনে নতুন মাত্রা, বাড়ছে আয়েশি ভ্রমণ

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

সমুদ্র-পাহাড়-দ্বীপ — সব পর্যটন আকর্ষণই আছে বাংলাদেশে। উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে দেখা মেলে হিমালয় পর্বতমালার রূপ। যাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কিংবা ঐতিহাসিক স্থান চষে বেড়াতে ভালো লাগে, তাদের জন্যও রয়েছে প্রচুর গন্তব্য।
দিন যত যাচ্ছে, দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের সংখ্যাও। অবশ্য ভ্রমণ এখন কেবল শখ নয়, প্রয়োজন। মানসিক সুস্থতার জন্য ভ্রমণের বিকল্প নেই। কেউ দু-দণ্ড শান্তির খোঁজে, কেউবা রোমাঞ্চকর কোনো অভিজ্ঞতার জন্য ছুটছেন। ২০২৪ সালেও এর ব্যতিক্রম হবে না দেশের পর্যটন খাতে নতুন বছরের হালচাল কেমন হবে? সেটা নিয়ে জানার আগ্রহ অনেকেরই।

তারুণ্যের স্বস্তি ক্যাম্পিংয়ে

তাঁবু থাকলে তরুণদের যেন আর চিন্তাই নেই! খোলা আকাশের নিচেই হবে নিরাপদ আশ্রয়। সমুদ্র, নদী, পাহাড় কিংবা গভীর অরণ্যে বেড়াতে গিয়ে তাঁবুবাসকেই বেছে নিচ্ছেন রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষেরা। অনেকে তো শুধু তাঁবুতে রাত কাটাতেই কয়েক দিনের জন্য ঘর ছাড়েন। ভ্রমণের এই পদ্ধতি বেশ সাশ্রয়ী ও রোমাঞ্চকর হওয়ায় মূলত দেশেরে তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে ক্যাম্পিং বা তাঁবুবাস।

এর ধারাবাহিকতায় গত কয়েকবছর ধরে কক্সবাজার, কাপ্তাই, চট্টগ্রাম, মহামায়া, সিলেট, ভোলা, গাজীপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় বাণিজ্যিক ক্যাম্প সাইট গড়ে উঠেছে। এসব জায়গায় ক্যাম্পিংয়ের যাবতীয় সরঞ্জাম ভাড়া পাওয়া যায়। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় বারবিকিউ, ক্যাম্পায়ারসহ খাবারের প্যাকেজও। নতুন বছরেও দলবদ্ধভাবে ক্যাম্পিং আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলেই ধারণা করছেন অনেকে। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক ক্যাম্প সাইটের সংখ্যাও বাড়বে। বিশেষ করে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মিরাসসরাই, আনোয়ারা, রাঙামাটির কাপ্তাই এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন স্পটে তাঁবুবাস বাড়বে।

হাউজবোটে নতুন মাত্রা

দেশের পর্যটনে গত তিন-চার বছর ধরে নতুন মাত্রা যোগ করেছে হাউসবোট। সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর এবং রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে বিলাসবহুল ও দৃষ্টিনন্দন হাউজবোট আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের। শুয়ে-বসে সৌন্দর্য উপভোগ করা আর রাতযাপনের মতো সুবিধা রয়েছে থাকে এসব হাউজবোটে।

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত হাউসবোটগুলোয় সাধারত চার থেকে ছয়টি কক্ষ থাকে। বিশেষভাবে নকশা করা এসব জলযানে থাকে বিদ্যুতের ব্যবস্থা। অন্দরসজ্জায় ব্যবহার করা হয় দৃষ্টিনন্দন সব সামগ্রী, থাকে উন্নত টয়লেট। এক রাত দুই দিনের একটি প্যাকেজে এসব হাউসবোটে ঘুরতে গুনতে হয় ৫-১০ হাজার টাকা। বর্তমানে সারাদেশে পর্যটকবাহী হাউস বোটের সংখ্যা দুই শতাধিক। এই সংখ্যা ২০২৪ সালে আরো বাড়তে পারে। কারণ পর্যটককেন্দ্রিক হাউজবোটে এতোদিন শুধু হাওরে দেখা গেলেও, চলতি বছরে কাপ্তাই হ্রদে যোগ হতে পারে একের পর এক হাউজবোট। রাঙামাটির প্রথম হাউজবোট ‘প্রমোদিনী’র উদ্যোক্তা দীপাঞ্জন দেওয়ান বলেন, ‘নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে এই খাতে তরুণরা আসছে, এতে সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে ভালো।’

বাড়ছে রিসোর্টকেন্দ্রিক আয়েশি ভ্রমণ

শহুরে ব্যস্ত জীবন থেকে একটু ছুটি সবারই প্রত্যাশিত। সেই ছুটিতে কেউ শক্তি খরচ করতে চান না। একঘেয়ে জীবনে ক্লান্ত নগরবাসীর অনেকেই হাওয়া বদলের উদ্দেশ্যে রিসোর্ট কেন্দ্রিক ভ্রমণের পরিকল্পনা সাজান।

শহুরে মানুষদের নির্মল বাতাসে আয়েশি ভ্রমণের জন্য গাজীপুর, নারায়াণগঞ্জ, নরসিংদী, মৌলভীবাজার, বান্দরবান, কক্সবাজার ও সিলেটে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রিসোর্ট। মানুষ যাচ্ছে বলেই প্রতি বছর একের পর এক গড়ে উঠছে নান্দনিক রিসোর্ট। এমনকি কিছু নির্দিষ্ট জায়গা পেরিয়ে রিসোর্ট নির্মিত হচ্ছে সুন্দরবনের মতো নির্জন বনাঞ্চলেও। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে রিসোর্ট শিল্পের বাজার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমমূল্য। করোনাকালের পর এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে এই খাতে আরো বেশি ছাড়িয়ে যাবে বলেই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

অফবিট ট্যুরিজম

জনপ্রিয় জায়গাগুলোতে হার হামেশা পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। তাছাড়া অনেকেই কক্সবাজার, সাজেক কিংবা সিলেটের মতো জায়গায় বার বার গিয়ে ক্লান্ত। কেউ জমজমাট লোকেশন পছন্দ করে থাকেন, আবার কেউবা ঠিক তার উল্টো। এসব কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অফবিট ট্যুরিজমও।

যারা মাটির চুলার রান্না খেতে চান, শান্তিতে পরিবার নিয়ে কিছুটা সময় কাটাতে চান, তারাই খোঁজ করেন অফবিট গন্তব্যের। মনপুরা দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, পেঁছারদ্বীপ, চর কুকরি মুকরিসহ দেশে অসংখ্য জায়গা রয়েছে যেগুলো খুবই নিরিবিলি। এছাড়া ঘুরে আসতে পারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আল্পনা গ্রাম টিকইল, দেশের প্রথম কৃষি পর্যটন গ্রাম ‘জয়রামপুর এগ্র ট্যুরিজম ভিলেজ’ কিংবা মণিপুরিদের ভানুবিল মাঝেরগাঁও গ্রাম।