• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

ভয়াবহ সংকটের কবলে বরিশাল সহ উপকূলের মৎস্য ও কৃষিখাত

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৪  

নজিরবিহীন তাপপ্রবাহে ভয়াবহ সংকটের কবলে বরিশাল সহ উপকূল অঞ্চলের মৎস্য ও কৃষিখাত। মাঠে থাকা প্রায় ৪ লাখ হেক্টরের বোরো ধান থোর থেকে ফুলস্তরে থাকায় সেচ সহ বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন এ সময়ে। পাশাপাশি  আউশের বীজতলা তৈরী ও রোপনের সময়ও শুরু হয়ে যাওয়ায় মাঠে মাঠে এখন কৃষকের নানামুখি ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু স্বাভাবিকের প্রায় ৭ ডিগ্রী বেশী তাপমাত্রায় কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠেই নামতে পারছেন না। এতে করে একদিকে কৃষকরা উঠতি বোরো ধান নিয়ে যেমনি বিপাকে, তেমনি মাঠে কাজ করতে না পেরে বেকার কৃষি শ্রমিকরাও রুজি হারিয়ে মহা সংকটে।

অপরদিকে অব্যাহত তাপ প্রবাহে নদ-নদীর পানিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে অভিপ্রয়ানী মাছ ইলিশ ক্রমশ গভীর সমুদ্রে চলে যাবার শঙ্কাও তৈরী হচ্ছে। অভয়াশ্রম বহির্ভূত নদ-নদীতে জেলেদের নিরাপদ মৎস্য আহরণও প্রায় বন্ধ অব্যাহত তাপপ্রবাহের কারণে। ফলে ইতোমধ্যে বাজারে ইলিশ সহ সব ধরনের মাছ সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। মাঠে আর নদীতে কাজ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে বরিশাল অঞ্চলের বেশ কয়েকটি স্থানে কৃষক ও কৃষি শ্রমিক সহ জেলেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

সমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ১৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে ৪ লাখ হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন করেছেন কৃষি যোদ্ধারা। যার ধান এখন থোর ও ফুল পর্যায়ে। কিছু কিছু এলাকার ধানে দুধুও তৈরী হয়েছে। এসময়ে নিয়মিত সেচ প্রয়োগ সহ নিবিড় পরিচর্যা সহ সার্বক্ষনিক নজরদারী প্রয়োজন বোরো ধানের জমিতে। কিন্তু গত প্রায় ১৫ দিন ধরে অব্যাহত তাপ প্রবাহে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপন্ন হবার সাথে কৃষি ও মৎস্য সেক্টরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে বোরো ধান কর্তন শুরুর হবার কথা। কিন্তু অব্যাহত তাপ প্রবাহে সময়মত বোরো কর্তন নিয়ে শংকিত বরিশালের কৃষি যোদ্ধারা। কিন্তু এরআগে নিবিড় পরিচর্যা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ায় উৎপাদন ব্যাহত হবার শঙ্কাও তৈরী হচ্ছে।

গ্রীষ্মের শুরুর এসময়ে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের স্থলে ইতোমধ্যে ৩৯.২ থেকে ৪০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসেও উঠে গেছে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আগামী কয়েকদিন দিনের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। অব্যাহত এ তাপপ্রবাহের সাথে বরিশালে বৃষ্টির দেখা মিলছেনা। আবহাওয়া বিভাগের মতে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের অনেক নিচে রয়েছে। গত মাসেও বরিশালে স্বাভাবিকের ৩০% কম বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসেও স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের খবর জানিয়ে ৬-৮ দিনে বরিশালে ১২০ থেকে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মাসের প্রথম ২৪ দিনে সর্বমোট বৃষ্টিপাতের পরিমান মাত্র ২২ মিলিমিটারের মত। ফলে বোরো ধানে বাড়তি সেচ প্রয়োগে উৎপাদন ব্যায় বাড়ছে। অপরদিকে অব্যাহত তাপ প্রবাহের সাথে বৃষ্টিপাতের সংকটে নদ-নদীর পানির উষ্ণতা বাড়ছে।

একইসাথে এ অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য নিয়ে ২.৪০ লাখ হেক্টরে আউশ আবাদে বীজতলা তৈরীর সময় অতিক্রান্ত হতে চললেও বৃষ্টির অভাবে বীজতলা প্রস্তুত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তেমনি নজিরবিহীন অস্বাভাবিক তাপ প্রবাহে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠে নামতে না পারায় এবার বরিশালে সময়মত আউশের আবাদ নিয়ে সংশয় দানা বাঁধছে কৃষি যোদ্ধাদের মধ্যেও।

এদিকে অব্যাহত তাপপ্রবাহের সাথে প্রখর রোদে জেলেরাও নদ-নদী ও বাওরে স্বাভাবিক মৎস্য আহরণ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি চলমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও উপকূল অভ্যন্তরের নদ-নদী থেকে ইলিশের ঝাক গভীর সমুদ্রে চলে যাবারও আশঙ্কা করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, এসময়ে নদ-নদীতে পানির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কথা বললেও তা ইতোমধ্যে ৩৬ ডিগ্রী অতিক্রম করায় পরিস্থিতি ইলিশ সহ অনুরুপ  মাছের জন্য অনুকূল নয়।

বাংলাদেশে মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর একাধিক বিজ্ঞানীর মতে ‘ইলিশ মাছের মাথায় ‘কেমো সার্ভার অর্গান’ রয়েছে, যাদ্বারা তারা নদ-নদীর তাপমাত্রা ও গভীরতা সহ সম্পূর্ণ পরিবেশ বুঝতে পারে। ইলিশ কখনোই তার জন্য প্রতিকূল পরিবেশে বসবাস করেনা। তাদের মতে, যদিও ইলিশ ডিম ছেড়ে গভীর সমুদ্রে চলে যায়। কিন্তু অনাবৃষ্টি সহ নদ-নদীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির মত প্রতিকূল পরিবেশে তারা বাস করতে চায়না। ফলে ‘বর্তমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে অভিপ্রায়নী মাছ ইলিশের সাগরমুখি হবার প্রবনতা তরান্বিত হতে পারে’ বলেও মনে করছেন মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীরা।

এসব কারণে বরিশাল অঞ্চলের বাজারে গত ১৫ দিনেরও বেশী সময় ধরে ইলিশ সহ নদ-নদীর মাছের সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মৎস্যজীবীরা এজন্য প্রখর রোদে জেলেদের নদীতে নামা থেকে বিরত থাকা সহ অনাবৃষ্টি ও তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ৭ ডিগ্রীরও বেশী ওপরে উঠে যাওয়ার বিষয়টি দায়ী বলে মনে করছেন।

এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে জেলেদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি’।