• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

জাজিরায় কৃষকদের মাঝে বীজ সংরক্ষণ পাত্র বিতরণ

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২১  

শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ
২০২১-২২ অর্থ বছরে এনএটিপি২ প্রকল্পের আওতায় খরিপ-২ মৌসুমে স্থাপিত রোপা আমন  প্রদর্শনীর উৎপাদিত বীজ সংরক্ষণের লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে বীজ সংরক্ষণ পাত্র বিতরণ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার জাজিরা উপজেলা কৃষি অফিসের সামনে থেকে বিনা মূলে ৬৩ জন কৃষক কৃষানীর মাঝে একটি করে প্লাষ্টিকে বীজ সংরক্ষণ পাত্র তুলেদেয়া হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাজিরা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ জামাল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন  কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ বীথি রানী বিশ্বাস,  উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার আব্দুল কুদ্দুস শিকদারএ সময় বিভিন্ন ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি অফিসার গন ও প্রদর্শনী ভুক্ত কৃষক উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ জামাল হোসেন বলেন,বীজ কৃষির ভিত্তি। বীজ জীবন্ত এবং প্রয়োজনীয় সব উপাদান দ্বারা এমন অনুপমভাবে সুসজ্জিত যে সঠিক সময়ে আকাঙিক্ষত স্থানে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে নতুন বংশধরের সূচনা করতে পারে। এ জীবন্ত বস্তুটিকে পরবর্তী মৌসুম পর্যন্ত ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেসব কাজ ও কৌশল অবলম্বন করতে হয় সেগুলোকেই বীজ সংরক্ষণ বলে।কেবলমাত্র আধুনিক ধানের জাত ব্যবহার করলেই ভালো বীজ উৎপাদন আশা করা যায় না। মানসম্পন্ন বীজ পেতে হলে ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন সরবরাহ ও উপযুক্ত পরিবেশের জোগান দেয়া দরকার। ধান চাষের জন্য যথাসময়ে বীজ বপন ও চারা রোপণ যেমন জরুরি তেমনি সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি প্রয়োগের উপযুক্ত সময় এবং প্রয়োগবিধির প্রতি লক্ষ্য রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। বীজ ধানের ভালো ফলন পেতে হলে জাত নির্বাচন থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ফসলের পরিচর্যা করে যেতে হবে।সহজভাবে শনাক্তকরণের জন্য বাছাই করা প্রতিটি গাছ কাঠি দিয়ে চিহ্নিত করতে হবে। বীজ সংগ্রহের জন্য পরিপক্ব অবস্থায় প্রথম বাছাই করা গাছ কাটতে হবে এবং পরে মাঠের অবশিষ্ট ফসল কাটা উত্তম।

বীজের জন্য কেটে নেয়া গাছগুলো আলাদাভাবে রাখতে হবে যাতে এগুলো একই ফসলের সাথে অন্যগাছের দানা মিশে না যায়। বীজের গুণাগুণ নষ্ট হওয়া রোধের জন্য বাছাই করা গাছগুলো ভালোভাবে শুকাতে হবে।বীজের জন্য ক্ষেতের অংশ বিশেষ বাছাই পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শস্যক্ষেতের মাঝ থেকে অথবা যতদূর সম্ভব ভেতর থেকে অংশ বিশেষ নির্বাচন করা দরকার।

যে পাত্রে বীজ রাখা হবে তাতে যেন কোনো ছিদ্র না থাকে। বীজ রাখার জন্য তেলের ড্রামে কিংবা বিস্কুট বা কেরোসিনের টিন প্রভৃতি ধাতব পাত্র ব্যবহার করা ভালো। ধাতব ব্যবহার করা সম্ভব না হলে মাটির মটকা, কলস, প্লাস্টিক ড্রাম বা মোট পলিথিনের থলি ব্যবহার করা যেতে পারে। পাত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে। মাটির পাত্র হলে পাত্রের বাইরের গায়ে আলকাতরা দিয়ে দুইবার প্রলেপ দিতে হবে।এবার পাত্রের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। বীজের পাত্র মাচায় রাখা ভালো যাতে পাত্রের তলা মাটির সংস্পর্শে না আসে। গুদামে বায়ু চলাচলের পার্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।বীজ কখনও সেঁতসেঁতে জায়গায় সংরক্ষণ করা ঠিক নয়। সংরক্ষণ করা বীজ মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা দরকার যাতে কোনো প্রকার পোকামাকড় বা ইঁদুর ক্ষতি করতে না পারে। দরকার হলে বীজ বের করে মাঝে মধ্যে শুকিয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে পরবর্তী মৌসুমে বীজ ব্যবহার, বিক্রয় বা বিতরণের আগে অবশ্যই বীজ গজানোর পরীক্ষা করা দরকার। সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ৮০টি সুস্থ-স্বাভাবিক চারা গজিয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তাই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যা দেশ রত্ন শেখ হাসিনা কৃষির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব কিছুই করছেন।তারই অংশ হিসেবে আমরা আমাদের উপজেলার ৬৩ জন চাষীর মাঝে বীজ সংরক্ষণ পাত্র বিতরণ করলাম।

মনে রাখবেন খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের জন্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিই একমাত্র পথ। আর এ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির মূল উপকরণই হচ্ছে সুস্থ, সবল, এবং সুপুষ্ট উন্নতমানের বীজ। জেনে রাখা ভালো বীজকে বলা হয় ‘শান্তির দূত’; ‘ভালো বীজে করলে চাষ, ফলন দ্বিগুণ,মিটবে আশ’।