• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের মানচিত্র

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২২  

শরীয়তপুর প্রতিনিধি: উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের সেই বইপ্রেমি মানিক দেশের ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের মানচিত্র তৈরি করেছেন। তৈরি হওয়া মানচিত্র থেকে ৬৪ জেলার মাটি স্পর্শ করা যাবে। পাওয়া যাবে একসঙ্গে সারা দেশের মাটির গন্ধও।

কিন্তু ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ হবে কীভাবে? ২০০২ সালের এসএসসি ব্যাচের বন্ধুদের কাছে ফেসবুকের মাধ্যমে নিজ জেলার মাটি কুরিয়ারে পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানান তিনি। মাটির পরিমাণ বলে দিয়ে কুরিয়ারের খরচ পাঠানোর ইচ্ছেও প্রকাশ করেন। কিন্তু যাঁরা মাটি পাঠিয়েছেন, তাঁরা কেউ টাকা নিতে রাজি হননি।

কুরিয়ারে প্রথম মাটি আসে রংপুর থেকে। দুই বছর চার মাসের মধ্যেই ৬৪ জেলা থেকে মাটি চলে আসে মানিকের কাছে। কুরিয়ারের মাধ্যমে ৫৭টি জেলার মাটি আসে মানিকের কাছে। দুই জেলার মাটি ডাকঘরের মাধ্যমে আসে। আর সরাসরি ৫ জেলার মাটি সংগ্রহ করেন তিনি। নিজ জেলা শরীয়তপুরের মাটিও সখিপুরের বন্ধু মাহমুদ হাসান সুমনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন।

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের গৈড্যা গ্রামের যুবক মানিক হোসেন (৩৭) বাবা মৃত আক্তার হোসেন। মা তাছলিমা বেগম। ছয় বোন এক ভাইর মধ্যে তিনি ছোট।

দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক লাইব্রেরি না থাকায় বইপড়া থেকে পিছিয়ে পড়ছিল উপজেলার মানুষ। জ্ঞানের ভান্ডার বইয়ের সঙ্গে যখন ভেদরগঞ্জের মানুষের দূরত্ব বাড়ছিল; ঠিক তখনই ভেদরগঞ্জের বইপ্রেমী মানুষকে বইমুখী করে ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মানিক হোসেন গড়ে তোলেন ‘উন্মুক্ত গ্রন্থাগার’। মানিক সেই গ্রন্থাগারে রেখেছে মানচিত্রটি।

মানিকের নির্মাণ করা বাংলাদেশের মানচিত্র দৈর্ঘ্যে আড়াই ফুট, প্রস্থে ৩ ফুট। মানচিত্রটি রাখা হয়েছে কাচঘেরা একটি স্টিল ও কাঠের বাক্সে। মানচিত্রের প্রতিটি জেলা তৈরি হয়েছে সে জেলার মাটি দিয়ে।

মানিক বলেন, উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের পাশাপাশি চেয়েছিলাম ব্যতিক্রম কিছু করার। আমি ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে মানচিত্র বানানোর স্বপ্ন দেখেছি। সেই স্বপ্ন আমার পূরন হয়েছে। মানচিত্রর পাশাপাশি আমি বিভিন্ন মুদ্রা দিয়ে একটি তাক করেছি। এখন বিভিন্ন যায়গা থেকে আমার লাইব্রেরি ও মানচিত্র দেখতে মানুষ আসছে।

মানিকের মা তাছলিমা বেগম বলেন, ও যে কাজ করছে তা শুধু ওর নিজের জন্য নয়; আমাদের পরিবারের জন্য, এ দেশের জন্য গৌরবজনক।

মানচিত্র দেখতে আশা সাব্বির হোসেন, বিল্লাল হোসেন বলেন, ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ করে তৈরি হওয়া বাংলাদেশের মানচিত্র দেখে অবাক হয়েছি। এমন সুন্দর কর্ম আর কখনো চোখে পরেনি।

উজ্জ্বল সরদার বলেন, মানিক ভাই আমাকে একটি মানচিত্রর ডিজাইন দেখান। সেই ডিজাইন মোতাবেক তাকে স্টিল দিয়ে জেলা ভিত্তিক একটি মানচিত্র তৈরি করে দিয়েছি। সেই মানচিত্রর প্রতিটি গর্ত নাকি ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে পূরণ করেছেন মানিক ভাই। মানুষ এখন মানচিত্রটি দেখতে আসেন। শুনে ভালো লাগছে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মশিউল আজম বলেন, আমি ঘুরে ঘুরে মানচিত্রটি দেখেছি। বিষয়টি আমার কাছে নতুন মনে হয়েছে। ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে মানচিত্র করা হয়েছে এই প্রথম দেখলাম। মানচিত্রটি আমার অত্যান্ত ভালো লেগেছে।

ভেদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল বাশার চৌকদার বলেন, মানিক ৬৪টি জেলা থেকে সংগ্রহ করেছে মূল্যবান মাটি। যে মাটির রং ভিন্নতা আছে। আমি লাইব্রেরি প্রদর্শনে এসে দেখতে পেলাম ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে মানিক মানচিত্র অংকন করেছেন। আমি তাঁর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। পৌরসভার পক্ষ থেকে মানিককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

লেখক ও শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনদীপ ঘরাই বলেন,  মানিকের উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের পাশাপাশি মানচিত্রটির কথা আলোচিত হচ্ছে, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো ওই মানচিত্রটি ছুঁয়ে দেখলে কিন্তু পুরো বাংলাদেশ ছুঁয়ে দেখা হয়ে যায়। মাটি আমাদের বড় একটি ব্যাপার। কারণ মা ও মাটিকে অনেক কাছাকাছি মনে করি এবং মানিকের এই যে উদ্যোগটা এটা আমি বলবো যে এসটেনশান।  এর আগের যে উদ্যোগটা ছিল উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের সেটা দেশব্যাপী অনেক আলোরন তৈরি করেছে। আমিও আশা করি, মানিক ৬৪ জেলার মাটি নিয়ে যে মানচিত্রটি করলো এটা দেশ প্রেমের একটা স্মারক হয়ে থাক। আমরা সবাই ওর পাশে আছি।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) পারভেজ হাসান বলেন, ভেদরগঞ্জে মানিক নামে আমাদের একজন বই প্রেমি, প্রকৃতি প্রেমি মানুষ সে বেশ কিছুদিন আগে সুন্দর একটি লাইব্রেরি তৈরি করেছে। শরীয়তপুরের মানুষ থেকে শুরু করে আশপাশের বিভিন্ন যায়গা থেকে লাইব্রেরিটি দেখার জন্য মানুষ আসছে। সম্প্রতি মানিকের একটি অভিনব উদ্যোগ দেখতে পেলাম  উদ্ভাবনী শক্তিতে  সৃষ্টি হয়েছে বিষয়টি। সে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মাটি সংগ্রহ করে একটি বাংলাদেশের মানচিত্র একেছে এবং সংশ্লিষ্ট জেলার যে অংশটুকু সেই জেলার মাটি দিয়ে সেই জায়গাটুকু পূরণ করেছে। এমন চমৎকার একটি মানচিত্রর অবয়ব তৈরি হয়েছে যেটা দেখে আমরা ভীষনভাবে আনন্দিত। এমন প্রকৃত প্রেমি মানুষ, মাটির সাথে সংলগ্ন মানুষ বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার জন্য ভীষনভাবে প্রয়োজন। আমি মানিকের সকল কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট থাকতে চাই। তাকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাতে চাই।