• বুধবার   ২২ মার্চ ২০২৩ ||

  • চৈত্র ৮ ১৪২৯

  • || ২৯ শা'বান ১৪৪৪

শরীয়তপুর বার্তা
ব্রেকিং:
নতুন বাজার খুঁজে বের করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়াঙ্গনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দক্ষ সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলছি দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে সর্বাত্মক প্রয়াস চালানোর নির্দেশ সরকারের পদক্ষেপের ফলে প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির হার অর্জিত হয়েছে ভারতকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব জনগণ বিএনপি-জামায়াতকে আর ক্ষমতায় আসতে দেবে না: প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় জনগণের সুস্বাস্থ্য অপরিহার্য পূর্বশর্ত বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ধরতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব: প্রধানমন্ত্রী

রাঙামাটির গভীরে বেড়িয়ে এলো নতুন আরেকটি ঝর্ণা

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২০  

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’ জীবনান্দ দাশের কবিতার এই লাইনের যথার্থতা খুঁজে পেয়েছেন সবাই। শুধু যে দেশের মানুষই এই সবুজ শ্যামলা আর পাহাড় নদীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ, তা কিন্তু নয়। প্রতি বছর হাজার হাজার বিদেশি পর্যটক আসে এদেশে। রাঙ্গামাটি, বান্দরবন অঞ্চলগুলো তার সবুজ পাহাড় আর ঝর্ণার অপার সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে।  

সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটি। পাহাড়ের বুকে সূর্যালোক, ভরা পূর্ণিমা রাতে হ্রদের পানিতে মৃদু ঢেউয়ের ওপর জোছনার ঝলকানি আর গিরি নির্ঝর ঝর্ণার রূপমাধুরী দেখেনি যে, সে যেন অপরূপ পাহাড়ি অরণ্যের জনপদ রাঙামাটি দেখেনি। এলোমেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু ও ছোট- বড় অসংখ্য পাহাড়ের সমাবেশ। এসব নিয়েই পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটি। যেদিকেই তাকাবেন যেন শৈল্পিক আঁকা দৃশ্য। মনে হবে কেউ যে মনের মাধুরী মিশিয়ে রং ঢেলে সাজিয়েছেন সবকিছু।  

দেশের এই পার্বত্য অঞ্চল দেশ ছাড়িয়ে বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। পাহাড়ের পর পাহাড় আর দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ যে কাউকেই আবেগপ্লুত করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে দেশি-বিদেশি ভ্রমণপ্রেমীদের আগমন ঘটে এই জনপদে। কেউ কেউ ঘুরে বেড়ান হ্রদে কেউবা আবার পাহাড়ের ভাজে দর্শনীয় স্থানগুলোতে। কেউবা ছুঁটে যান উদ্ভিন্ন যৌবনা ঝর্ণায়।        

রাঙামাটির ঝর্ণার কথা বলতেই উঠে আসে সুবলং ঝর্ণার কথা। তবে এখনে পাহাড়ের ভাজে ভাজে মানবকূল বিভিন্ন সময় আবিষ্কার করেছে ছোট-বড় অসংখ্য ঝিরি-ঝর্ণার। তার একটিই দেবতাছড়ি ঝর্ণা। পাহাড়ের গভীর থেকে বেড়িয়ে এলো এই ঝর্ণাটি। তবে ঝর্ণাটির স্থানীয়ভাবে কোনো নাম নেই। স্থানীয় দেবতাছড়ি পাড়ায় অবস্থিত বলেই বলা হয়ে থাকে দেবতাছড়ি ঝর্ণা। লোকচক্ষুর আড়ালের এই গিরি নির্ঝরে পৌঁছানো এতটা সহজও নয়। পাড়ি দিয়ে হয় দীর্ঘপথ। তবে জনশূন্য থাকা এই ঝর্ণাটি দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রায় সময়ে ঝর্ণায় গা ভেজাতে ছুঁটে আসছে তারুণ্যের দল। 

 

প্রায় সময়ে ঝর্ণায় গা ভেজাতে ছুঁটে আসছে তারুণ্যের দল

প্রায় সময়ে ঝর্ণায় গা ভেজাতে ছুঁটে আসছে তারুণ্যের দল

সম্প্রতি দেবতাছড়ি ঝর্ণায় ঘুরে এলো আটজনের একটি ভ্রমণদল। ভ্রমণদলের সদস্য নিহার কবির জানিয়েছেন, রাঙামাটি জেলা শহরের অদূরে থাকা এই ঝর্ণাতে এখনো মানুষের নজর তেমনটা পড়েনি। এটি আবিষ্কারের পর থেকেই স্থানীয় ভ্রমণপ্রেমীদের সমাগম বাড়ছে, দিনদিন জনপ্রিয় উঠছে। আমরা বন্ধুরা মিলে কয়েকদিন আগে শুরু এসেছি। তবে অনেকটা দুর্গম পথ। তাই ঝর্ণাটি লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে আছে। বর্ষা কিংবা বর্ষা পরবর্তী সময়ে এমন ঝর্ণাগুলো প্রাণ ফিরে পায়। তবে প্রচারণার অভাবে জেলার অনেক অধিবাসীই এসব ঝর্ণার কথা জানেনই না।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানায়, বিগত কয়েক বছর ধরে এই সময়টাতে পাড়ার ঝর্ণাতে দূরদুরান্ত থেকে মানুষ ছুঁটে আসছে। মানুষের সমাগম দেখে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটি দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তারা বলেন, এই এলাকাতে ঝর্ণা দেখাকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের নিয়মিত সমাগম ঘটলে এতে করে স্থানীয়রাও ছোট পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলে আর্থিকভাবে আরো সমৃদ্ধ হতে পারবেন।    

দেবতাছড়ি ঝর্ণা থেকে ঘুরে আসা ভ্রমণপ্রেমী সাইফুল বিন হাসান জানান, এতদিন অনেকেই জেলা শহরের অদূরে পড়ে থাকা এই ঝর্ণার খবর জানত না। এখন লোকমুখে শুনে শুনে অনেকেই এই ঝর্ণাটিতে আসছে। শরীর-মনকে ভিজিয়ে নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি অন্যান্য জেলার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এখানে পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠলে স্থানীয়রাও পর্যটকদের সেবার পাশাপাশি আর্থিকভাবে সচ্ছ্বল হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের হাত ধরেই।

 

পাহাড়ের বেশ গভীরেই এই ঝর্ণা

পাহাড়ের বেশ গভীরেই এই ঝর্ণা

আপনিও কিন্তু ঘুরে আসতে পারেন এই ঝর্ণা থেকে। ছুটির দিনে পরিবার আর প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে শরীর মন ভিজিয়ে নিতে পারেন ঝর্ণার শীতল পানিতে।

জেনে নিন রাঙামাটির এই দেবতাছড়ি ঝর্ণায় কীভাবে যাবেন-  

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম দেবতাপাড়াতেই এই ঝর্ণাটির অবস্থান। জেলা শহর অদূরে এই ঝর্ণাটিতে যেতে হলে টানা ৪০-৪৫ মিনিটের মতো সড়ক পথে অটোরিকশা কিংবা বাসে যেতে হবে। ঘাগড়া-কাপ্তাই বড়ইছড়ি সড়কের ঘাগড়া বাজার থেকে   কাপ্তাইয়ের পথে তিন কিলোমিটার পাড়ি দিলেই দেবতাছড়ি পাড়া। পাড়ায় প্রবেশের পথেই রয়েছে একটি ছোট্ট চায়ের দোকান। যেটি বুইজ্জার দোকান নামেই পরিচিত। এই দোকানের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ঝিরি পথে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই দেখা মিলবে এই গিরি নির্ঝরের। জেলা শহর থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নিলে ভাড়া পড়বে হাজার খানেক।

প্রয়োজনীয় তথ্য
 
ভ্রমণ যাওয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও খাবার পানি সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। কেননা মাঝখানে পাহাড়ি ঝিরি-ঝর্ণায় হাঁটাচলা করতে যেকোনো ধরণের কাটাছেঁড়া হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা অনেকটা প্রয়োজন। এছাড়া খালি পায়েও ঝিরি পথে হাঁটা যাবে না। আবার দীর্ঘ পাহাড়ি পথে হাঁটার পর ক্ষিদে ও পানির তৃষ্ণা লাগবে তাই শুকনো খাবার ও পানি সঙ্গে রাখা অতীব জরুরি।