• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

দক্ষিণাঞ্চলে মাল্টায় সমৃদ্ধির হাতছানি

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০  

‘আমি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত বারি মাল্টা-১ আমার ২ একর জমিতে রোপন করি। ২০১৭ সালেই প্রতিটি গাছ থেকে ৫/৬ কেজি করে মাল্টার ফলন পাই। ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও ভাল ফলন পেয়েছি। চলতি বছর আমার বাগানে প্রচুর মাল্টা ধরেছিলো। থোকায় থোকায় ধরা মাল্টার ভারে গাছের ডাল ঝুলে পড়েছে। ফলন দেখে মন ভরে গেছে। আশা ছিল ৪ টন ফলন পাবো। কিন্তু বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে গাছের কিছু মাল্টা ঝড়ে পড়ছে। তারপরও আমি অন্তত ৩ টন ফলন পাবো বলে আশা করছি।’

কথাগুলো বললেন, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক ওবায়দুর রহমান (৫২)।

তিনি আরো বলেন, এবছর মাল্টা বিক্রি করে অন্তত আড়াই লাখ টাকা পাবো বলে আশা করছি। এ জমিতে ধান-পাটসহ অন্যান্য ফসল করলে বছরে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা লাভ পেতাম। কিন্তু মাল্টা চাষে ৪ গুন বেশি অর্থাৎ ২ লাখ টাকা লাভ পাব বলে ধারণা করছি। মাল্টা চাষ আমাকে সমৃদ্ধি দিয়েছে। মাল্টা চাষ করে যেমন প্রচুর লাভ হয়, তেমনি গাছ থেকে কলমের চারা উৎপাদন করেও মল্টার চেয়ে বেশি আয় করা যায়।

ওবায়দুর রহমান বলেন, চাষাবাদের শুরুতে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আমাকে বিনামূল্যে মাল্টার চারা দিয়েছে। এছাড়া তখন তারা প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক ও চারা রোপন করে দিয়েছে। এখন আমরা তাদের পরামর্শে পরিচর্যা করছি। এতেই সোনা ফলছে।’

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবেশ প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করণের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ণ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলানা ও সাতক্ষীরা জেলার ১৭ উপজেলায় মাল্টা চাষ বৃদ্ধি করতে এ পর্যন্ত ১০০টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। এসব বাগানে এ বছর অন্তত ১৫০ টন মাল্টা উৎপাদিত হয়েছে।

প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. রেজাউল করিম বলেন, প্রতিটি মাল্টা বাগানের প্রতি একরে প্রত্যাশার চেয়ে দেড় থেকে দুই টন বেশি মাল্টা উৎপাদিত হয়েছে। মাল্টা বিক্রি করে কৃষক অধিক লাভের টাকা ঘরে তুলছেন। তাদের দেখাদেখি অনেক কৃষক লাভজনক মাল্টা চাষে প্রবল আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

কদমপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন (৪৮) বলেন, আমার চাচা ওবাদুর রহমানের বাগান দেখে আমি মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। ইতোমধ্যে জমি প্রস্তুত করেছি। এছাড়া তার দেখাদেখি কৃষক সামাউল ইসলামসহ আরো অনেকে কদমপুর গ্রামে লাভজনক মাল্টা বাগান করেছেন।

প্রকল্প পরিচালক ড. এমএম কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের উদ্ভাবিত বারি মাল্টা-১ দেশের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। মাল্টা চাষ বৃদ্ধি পেলে এর আমদানি নির্ভরতা কমবে। তাই স্থানীয়ভাবে মাল্টার উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর আমারা জোর দিয়েছি। দক্ষিণাঞ্চলের ৫ জেলায় মাল্টা চাষে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা এ প্রকল্প থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করছি। নতুন নতুন মাল্টা বাগান করে দিচ্ছি। মাল্টা চাষ সম্প্রসারিত হলে দিশাহীন অনেক বেকার কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পাবেন। প্রচুর উপার্জন করে হবেন সাবলম্বী। সম্ভাবনাময়ী মাল্টা চাষ আমাদের দেশে সমৃদ্ধির হাতছানি দিচ্ছে।