• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শরীয়তপুর বার্তা

দোয়া বা মোনাজাত কী? এর ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য

শরীয়তপুর বার্তা

প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার মুখাপেক্ষী হওয়া এবং তার নৈকট্য লাভ করা ব্যতীত মানুষের কোনো উপায় নেই, আর দোয়া বা নোজাত হলো আল্লাহ তাআলার নৈকট্যলাভের বিশেষ বাহন ও মাধ্যম।
দোয়া বা মোনাজাত কী? এর ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য

দোয়া বা মোনাজাত বা প্রার্থনার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নিকটবর্তী হয়। এ দ্বারা মানুষ তার প্রতিপালকের ইবাদত করে, উদ্দেশ্যে লাভে সফল হয়, তার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে পাপ মোচন করে।

ইসলামের পরিভাষায়, দোয়া (আরবি: دُعَاء বহুবচন: আদ ইয়াহ, আরবি: أدْعِيَة) বলা হয়। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘আহ্বান’ বা ‘ডাকা’, যা ইসলামে একটি বিশুদ্ধ মিনতি প্রক্রিয়া।

দু’হাত পানি নেয়ার মতো কোষ করে ধরে মাঝে এক আঙুল পরিমাণ ফাঁকা রেখে বুক পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহর কাছে চাওয়াকে দোয়া বা মোনাজাত বলে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ চায় যে বিপদের সময় তার দোয়া কবুল হোক, তাহলে সে যেন সুখের দিনগুলোতে বেশি বেশি দোয়া করে’। (তিরমিজি: ৩৩৮২)

দোয়া শব্দটি এসেছে একটি আরবি শব্দ থেকে যার বাংলায় অনুবাদ ডাক বা তলব কর, এবং মুসলমানরা একে ইসলামি আইন হিসেবে এবং সওয়াব বিবেচনা করে পালন করে থাকে।

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘দোয়া ইবাদতের সারাংশ’; আর মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা তার প্রেরিত ধর্মগ্রন্থ কোরআনুল কারিমে বলেছেন: وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ

উচ্চারণ: ‘ওয়া কা-লা রাব্বুকুমুদ ‘ঊনীআসতাজিব লাকুম ইন্নাল্লাযীনা ইয়াসতাকবিরূনা ‘আন ‘ইবা-দাতী সাইয়াদখুলূনা জাহান্নামা দা-খিরীন’।

অর্থ: ‘তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে, এবং লাঞ্চিত হবে’। (সূরা: আল-মু’মিন, আয়াত: ৬০)

আল্লাহ তাআলা তার বান্দাকে বিভিন্ন বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। বান্দা যাতে দোয়ার মাধ্যমে তার শরণাপন্ন হয়। তাকে স্মরণে রাখে। সর্বোপরি তার অসীম রহমত লাভে ধন্য হতে পারে।

আল্লাহর কাছে চাওয়ার মধ্যে কোনো লাজ-লজ্জা বা শরমের কিছু নেই। এটা হীনম্মন্যতারও বহিঃপ্রকাশ নয়। বরং এটাই হলো প্রাচুর্যের চাবিকাঠি, সব এবাদতের সারকথা। বস্তুত এবাদতের উদ্দেশ্য হলো নিজের অহংবোধ মিটিয়ে রাব্বুল আলামিনের কাছে সমর্পিত হওয়া। আর এতেই রয়েছে বান্দার অজস্র সম্মান ও মর্যাদা। তাই দোয়া অনুগত্য বা দাসত্বের বহিঃপ্রকাশ। আর আল্লাহ তাআলা বান্দার এমন বিনম্র মনোভাবকে খুব পছন্দ করেন। বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তার নিজের প্রয়োজন ও অভাবের কথা তুলে ধরে তখন আল্লাহ তাআলা খুব খুশি হন।

হাদিসে এসেছে- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী রাসূলল্লিাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না’। (বুখারি, হাদিস: ৬৩৪০)

হাদিসে আরো এসেছে- জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কোনো ব্যক্তি (আল্লাহর কাছে) কোনো কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা তাকে তা দান করেন। অথবা তদানুযায়ী তার থেকে কোনো অমঙ্গল প্রতিহত করেন। যতক্ষণ না সে কোনো পাপাচারে লিপ্ত হয় বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য দোয়া করে’। (তিরমিজি)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ চায় যে বিপদের সময় তার দোয়া কবুল হোক, তাহলে সে যেন সুখের দিনগুলোতে বেশি বেশি দোয়া করে’। (তিরমিজি: ৩৩৮২)

মুহাম্মাদ ইবন হুমায়দ রাযী ও সাঈদ ইবন ইয়াকুব (রহঃ) ...... সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দোয়া ছাড়া আর কিছুই তাকদীর রদ করতে পারে না আর নেক আমল ছাড়া আর কিছুই বয়সে বৃদ্ধি ঘটায় না’। (হাসান, সহিহাহ ১৫৪, তিরমিজী হাদিস: ২১৩৯)

আবূ যর (রাযি.) এর সূত্রে ইমাম মুসলিম (রহ.) কতৃক বর্ণিত এক হাদিসে কুদসীতে এসেছে, ٍ‘হে আমার বান্দারা, তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট তবে যাকে আমি হেদায়েত  করেছি সে ছাড়া। অতএব তোমরা আমার কাছে হেদায়েত তলব করো, আমি তোমাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেব। হে আমার বান্দারা, তোমরা সবাই  ক্ষুধাতর, তবে যাকে আমি অন্ন দিয়েছি সে ছাড়া। অতএব, তোমরা আমার কাছেই খাদ্য চাও, আমি তোমাদেরকে খাওয়াব। হে আমার বান্দারা, তোমরা সবাই বস্ত্রহীন তবে যাকে আমি বস্ত্র পরিয়েছি সে ছাড়া। অতএব আমার কাছেই তোমরা পরিধেয় তলব করো, আমি তোমাদেরকে পরিধান করাব’। (মুসলিম)

উল্লেখ্য, দোয়া করতে হয় প্রশান্তচিত্তে ও দৃঢ় মনে। দোয়া শুরু করার নিয়ম বা আদব হলো- শুরুতে আল্লাহ তাআলার হামদ-সানা (প্রশংসা) ও দরুদ শরিফের মাধ্যমে দোয়া শুরু করা। এরপর নিজের প্রয়োজন, নিজের পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, সমাজ, যেকোনো অবস্থার জন্য দোয়া করবেন। এরপর শেষ করার সময়ও  আল্লাহ তাআলার হামদ-সানা (প্রশংসা) ও দরুদ শরিফের মাধ্যমে শেষ করার নিয়ম। এছাড়া চাইলে দোয়ার শেষে আমিন বলা যায়। তবে আমিন বলে দোয়া শেষ করতেই হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত, ২য়-খণ্ড, ৩৪৫)